পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভার নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ‘নন্দীগ্রাম’ কেন্দ্র থেকেই মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। আজ শুক্রবার দুপুরে হলদিয়ার মহকুমা শাসকের দফতরে (এসডিও) মনোনয়ন পত্র জমা দেন শুভেন্দু।
শুভেন্দুর সাথেই এদিন মনোনয়ন পত্র জমা দেন হলদিয়ার বিজেপি প্রার্থী তাপসী মন্ডল এবং মহিষাদলের বিজেপি প্রার্থী বিশ্বনাথ ব্যানর্জি। বিজেপি প্রার্থীদের মনোনয়নের সময় শুভেন্দুর সাথে ছিলেন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি সহ অসংখ্য দলীয় কর্মী-সমর্থক।
পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪ আসনে বিধানসভার নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র নন্দীগ্রাম। আগামী ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় এই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। এই কেন্দ্রে শুভেন্দুর প্রতিপক্ষ হচ্ছেন তারই একসময়ের সহকর্মী তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জি।
অন্যদিকে, বাম-কংগ্রেস-আএইসএফ জোটের প্রার্থী হয়েছেন সিপিআইএম’এর যুব সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। যদিও মূল লড়াই হবে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যেই। ইতিমধ্যেই ১০ মার্চ এই কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন মমতা।
মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার আগে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে শুভেন্দু বলেন ‘নন্দীগ্রামে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। হারাবো, চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনারা একদম নিশ্চিন্তে থাকেন। নন্দীগ্রাম কেবল একটি বিধানসভা কেন্দ্রই নয়। এই নামের সাথে ২০১১ সালে রাজ্যে পরিবর্তন যুক্ত হয়েছে। জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে লড়াইতে নন্দীগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।'
এদিকে, মমতার বিশ্বস্ত সঙ্গী ও রাজ্যের সাবেক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘এই রাজ্যের জ্বলন্ত সমস্যা হল অর্থনীতি। বিগত বামফ্রন্টের সরকার ২ লাখ কোটি রুপি ঋণের বোঝা চাপিয়ে গেছে আর গত নয় বছরে তৃণমূলের সরকারের আমলে সেই ঋণের মাত্রা বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি রুপি। বাংলায় বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সরকারি চাকরিতে শূণ্যপদ তুলে দেওয়া হয়েছে, রাজ্যের কৃষকদের অবস্থা ভয়াবহ, এখানকার মানুষ আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধা পায় না। তাই এর থেকে বাংলাকে মুক্তি দিতে আরেক বার পরিবর্তন প্রয়োজন।’
অন্যদিকে, ধর্মেন্দ্র প্রধানের দাবি আগামী ২ মে’ এরপর বাংলায় বিজেপি সরকার তৈরি হবে। তার অভিযোগ বাংলার নারী, কৃষকদের জন্য মোদি সরকার যে অর্থ পাঠিয়েছে তার সুবিধা রাজ্যের মানুষ পাচ্ছেন না। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পকে চালু করতে দেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালে কংগ্রেসের টিকিটে কাঁথি পুরসভার কাউন্সিলর হয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন শুভেন্দু। পরে কংগ্রেস থেকে মমতার হাত ধরে তৃণমূলে আসেন শুভেন্দু। ২০০৯ সালে তৃণমূলের টিকিটে লোকসভার সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে বিধানসভার নির্বাচনে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে জিতে রাজ্যের মন্ত্রীও হন তিনি। ধীরে ধীরে মমতার বিশ্বস্ত সৈনিক হয়ে ওঠেন। যদিও শেষদিকে মমতা-শুভেন্দুর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। গত ডিসেম্বর মাসেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু। আর সেই শুভেন্দুকেই নন্দীগ্রামে প্রার্থী করেছে বিজেপি। ফলে রাজ্যসহ পুরো দেশের নজর থাকবে এই কেন্দ্রের দিকে।
বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির