বাংলা সাহিত্য জগতে নক্ষত্রপতন! এবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। বুধবার সকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
সেক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের শিকার হলেন শঙ্খ ঘোষ। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী প্রতিমা, দুই কন্যা সেমন্তী ও শ্রাবন্তী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু ও অসংখ্য গুণগ্রাহীকে।
গত ১৪ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হন জ্ঞানপীঠ ও সাহিত্য একাডেমি সম্মাননাপ্রাপ্ত শঙ্খ ঘোষ। এরপর কলকাতার সল্টলেকের বাড়িতেই আইসোলেশনে ছিলেন এই কবি। সেখানেই চলছি তার যাবতীয় চিকিৎসা। এছাড়াও বেশ কয়েকদিন ধরেই বয়স জনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকেই হঠাৎ করেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বুধবার সকালে ১১টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাংলা সাহিত্য জগতে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখার্জি জানান, ‘শঙ্খ ঘোষ খুব সহজ সরল মানুষ ছিলেন। তিনি বাংলা সাহিত্যকে অন্য মাত্রা দিয়েছেন। সাহিত্য জগতে তার চলে যাওয়াটা বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়েছে। সেইসাথে আমার মাথার ওপর থেকে ছাদটা সরে গেল।’
জয় গোস্বামী জানান, ‘তার মৃত্যুতে আমি সত্যিই অসহায় বোধ করছি। ওর সাথে আমার গত প্রায় ৪৫ বছরের যোগাযোগ। সব একমুহূর্তে শেষ হয়ে গেল। শঙ্খ ঘোষের কবিতা থেকেই আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। তার মৃত্যুতে আমার কি হারাল তা আমিই জানি।’
শোক জ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও। এদিন সকালে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে এক নির্বাচনী জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খুব দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে আমাদের অতি প্রিয়, নামজাদা, বাংলার গর্ব, সাহিত্যরত্ন শঙ্খ ঘোষকে আমরা হারিয়েছি। তার মেয়ের সাথে আমার কথা হয়েছে। তার মৃত্যুতে আমরা খুবই মর্মাহত, দুঃখিত। শঙ্খদার মৃত্যুতে আমরা শোক জ্ঞাপন করছি। তার পরিবার ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে সমবেদনা জানাই। তিনি কোভিড-১৯ এর মারা গেছে। তা সত্ত্বেও যাতে রাষ্ট্রীয় সম্মানের সাথে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা যায় মুখ্যসচিবকে (আলাপন ব্যানার্জি) নির্দেশ দিয়েছি। তবে শঙ্খদা নিজে গান স্যালুট পছন্দ করতেন না। সেটা বাদ রেখে অন্য কর্মসূচি পালন করা হবে।’
যদিও পরিবারিক সূত্রে খবর, শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে তারা কোনো আড়ম্বর চায় না। তারা চায় নীরবেই হোক শেষকৃৃত্য।
তার মৃত্যুর খবর পেয়েই তার বাড়িতে ছুটে যান রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সাধন পান্ডে। ফিরহাদ জানান, ‘কোভিড নীতিমালা মেনেই তাকে বিকালে নিমতলা মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই তাকে দাহ করা হবে।’
১৯৩২ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের চাঁদপুরে জন্ম শঙ্খ ঘোষের। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যাল, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেছেন।
‘বাবরের প্রার্থনা’ কাব্যগ্রন্থ’এর জন্য ১৯৭৭ সালে সাহিত্য একাডেমি সম্মাননা পান তিনি। এছাড়াও মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে, গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ তার অন্যতম কাব্যগ্রন্থ। ১৯৯৯ সালে ফের একবার সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত করা হয় তাকে। ওই বছরেই দেশিকোত্তম সম্মাননাও প্রদান করা হয় তাকে। ২০১১ সালে ভারত সরকারের দেওয়া ‘পদ্মভূষণ’ সম্মানে ভূষিত হন শঙ্খ ঘোষ। ২০১৬ সালে পান জ্ঞানপীঠ পুরস্কার।
বরাবরই তিনি ছিলেন প্রতিবাদী। বর্তমান সরকারের কোনো জনবিরোধী কাজকর্ম হোক বা কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের-তাকে বরাবরই কলকাতার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সরব হতে দেখা গেছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন