৫ আগস্ট, ২০২১ ২২:২৯

বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন কলকাতায় শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উদযাপিত

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন কলকাতায় শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উদযাপিত

বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন কলকাতায় শেখ কামালেন জন্মবার্ষিকী উদযাপিত

বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ রাসেলের ৭২তম জন্মবার্ষিকী বৃহস্পতিবার। এ উপলক্ষে এদিন বিকালে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রাঙ্গণে একাধিক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। 

কোভিড স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনেই শহীদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা উপ-হাই কমিশনার তৌফিক হাসান, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত ও আনন্দবাজার পত্রিকার মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রখ্যাত সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তার ক্রীড়া ও রাজনৈতিক সহকর্মী সুবীর হোম রায়। এ ছাড়া কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের প্রথম সচিব (প্রেস) মোফাকখারুল ইকবাল, কাউন্সেলর (শিক্ষা ও ক্রীড়া) রিয়াজুল ইসলাম, কাউন্সেলর (কন্স্যুলার) মো. বশির উদ্দিন, দ্বিতীয় সচিব (কন্সুলার) রাসেল জমাদার। 

পরে শেখ কামালের ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।  এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জীবনের ওপর এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
 
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান। বক্তব্য রাখতে উঠে তৌফিক হাসান বলেন, ‌‘এটি আগস্ট মাস, শোকের মাস এই মাসেই বঙ্গবন্ধুর পরিবার শহিদ হয়। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন শেখ কামাল। তিনি এতগুণের অধিকারী ছিলেন যে তাকে অনায়াসেই অলরাউন্ডের আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। তিনি ছিলেন খুব নির্ভীক ও মানবিক মনের মানুষ এবং বঙ্গবন্ধুর ছেলে বলেই হয়তো জন্মগতভাবে এটি পেয়েছেন। রাষ্ট্রপ্রধানের সন্তান হয়েও কখনো অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করেননি। রবীন্দ্রসংগীত ছিল তার প্রতিবাদের ভাষা। মাত্রা ২৬ বছর বয়সে তিনি যে গুণের স্বাক্ষর রেখেছেন তা আগামী প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস।’

শেখ কামালের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সুবীর হোম রায় বলেন, ‘দীর্ঘাঙ্গী, সাদা উজ্জ্বল শেখ কামাল ছিলেন আমার ঘনিষ্ট বন্ধু, আমার কামাল ভাই। বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের মার্জিত, সদালাপী, শুদ্ধ সংস্কৃতির উজ্জ্বল পদচারণা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র শেখ কামাল ছিলেন ভালো ক্রিকেটার, উৎসাহী নাট্যকর্মী, সংগীত অনুরাগী ও উজ্জ্বল ছাত্র নেতা। তবে তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি ছিলেন একজন মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ।’ 

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন,‘আমার সাথে খুবই অল্প দিনের জন্য দেখা হয়েছে। কামাল ছিলেন বহুগুণের অধিকারী। শেখ কামাল একজন সৌম্য ও সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় তার ছিল অবাধ বিচরণ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানির এডিসি ছিলেন। বসতেন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অস্থায়ী কার্যালয় কলকাতার ৮, থিয়েটার রোডে বর্তমানে- যা শেক্সপিয়র সরণি। বাংলাদেশের চলমান মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করার জন্য শেখ কামালের কাছে গেলে আলোচনার একপর্যায়ে উঠে আসতো সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সখ্যতার কথা।’

কাউন্সেলর (শিক্ষা ও ক্রীড়া) রিয়াজুল ইসলাম তার আলোচনায় বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর অন্যতম সংগঠক। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আতাউল গণি ওসমানির এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বলিষ্ঠ কর্মী এবং নিবেদিত প্রাণ। সংগ্রামী ও আদর্শবাদী সংগঠক হিসেবে ৬৬-এর স্বাধিকার আন্দোলন ও ৬৯-এর গণ আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯৭২ সালে তিনি আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠা করেন।
 
কাউন্সেলর (কন্স্যুলার) মো. বশির উদ্দিন বক্তব্যে বলেন, শেখ কামাল ছিলেন মুক্তমনা, আজন্মচারী। বঙ্গবন্ধুর সন্তান হওয়ায় স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের নির্মমতা ও মিথ্যাচারের শিকার হন শেখ কামাল। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি, ক্রীড়া ও সঙ্গীতাঙ্গনে অনেক আগেই নবযুগের সূচনা হত। এখনও প্রগতিশীল তরুণ সমাজের কাছে শেখ কামাল আদর্শের প্রতীক হয়ে আছেন।

দ্বিতীয় সচিব (কন্সুলার) রাসেল জমাদার বক্তব্যে বলেন, শেখ কামালের জন্ম ও কর্মময় জীবন আমাদের কাছে অতুলনীয়। কারণ, সততার কষ্টি পাথরে তিনি ছিলেন অনন্য। শেখ কামাল ছিলেন উদ্দীপ্ত যৌবনের দূত ও পরোপকারী ব্যক্তিত্বের পুরোধা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে তিনি প্রথম শহিদ। শেখ কামালের জন্ম আগস্ট মাসে, এই আগস্টেই তিনি পরিবারের সদস্যের সাথে শহিদ হন।  

এদিনের আলোচনামূলক অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) শামীমা ইয়াসমীন স্মৃতি। 

উল্লেখ্য, ১৯৪৯  সালের ৫ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ২৬ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধুসহ সপরিবারের সঙ্গে শহিদ হন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল। 
 
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 


 
 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর