রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘সামাজিক পরিবর্তনে তরুণ নেতৃত্ব: সম্ভাবনা, সংগ্রাম ও পথচলা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা। তরুণদের নেতৃত্ব, দায়িত্ববোধ ও সমাজ পরিবর্তনে তাদের সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে আয়োজিত এ সভার আয়োজন করে বসুন্ধরা শুভসংঘ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজ উদ্দীন একাডেমিক ভবনের ২০৬ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন। সভায় ক্রীড়া সম্পাদক আল ফারাবী দুরন্তর সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি মিশন চাকমা। মূল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বসুন্ধরা শুভসংঘ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আলফাজ উদ্দিন টনিক।
আলোচনায় আলফাজ উদ্দিন টনিক বলেন, ‘বাংলাদেশের সামাজিক পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। তারা শুধু পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে না, বরং বাস্তবতাকে বদলে দেওয়ার সাহস রাখে। আমাদের তরুণরা আজ অন্যায়, বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে সমাজে নতুন চিন্তা ও উদ্ভাবনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই পথচলা কখনোই সহজ নয়। সীমিত সুযোগ, প্রাতিষ্ঠানিক বাধা এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা প্রায়ই তাদের অগ্রযাত্রায় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। তবুও তরুণ নেতৃত্ব বারবার প্রমাণ করেছে ইচ্ছাশক্তি, সততা ও নিষ্ঠা থাকলে পরিবর্তন সম্ভব।’
তরুণ নেতৃত্বের পরিধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্ব যেমন রাষ্ট্র পরিচালনায় ভূমিকা রাখে, তেমনি সমাজসেবক, সমাজকর্মী বা সামাজিক নেতারাও জনগণের জীবনে পরিবর্তনের অগ্রদূত। তারা নীরবে কাজ করেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য। তাদের কাজ রাজনীতি নয়, মানবতার সেবা। আর সেই সেবাই সমাজে প্রকৃত পরিবর্তনের ভিত তৈরি করে।’
সভায় সহ-সভাপতি মিশন চাকমা বলেন, ‘তরুণ নেতৃত্ব কেবল বক্তৃতা বা স্লোগানে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। সমাজের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খোঁজা এবং বাস্তবে তা কার্যকর করার মধ্য দিয়েই একজন তরুণ প্রকৃত নেতৃত্বের পরিচয় দিতে পারে। শুভসংঘ সেই চেতনা থেকেই কাজ করছে যেখানে প্রতিটি তরুণ সমাজ পরিবর্তনের অংশীদার হয়ে উঠবে।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মাহবুব হাসান বলেন, ‘সামাজিক পরিবর্তন একদিনে ঘটে না, এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তরুণদের দায়িত্ব এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। নেতৃত্ব মানে কেবল নির্দেশ দেওয়া নয়, বরং অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করা, সহযোগিতা করা এবং মানবিক মূল্যবোধ ধারণ করা। বসুন্ধরা শুভসংঘ সেই মানবিক নেতৃত্ব বিকাশের আন্দোলনের অংশ হিসেবে কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকের তরুণদের ভাবনা, উদ্যোগ ও ইতিবাচক মনোভাবই ভবিষ্যতের সমাজ নির্মাণের মূল ভিত্তি। আমাদের উচিত তরুণদের প্রতি আস্থা রাখা এবং তাদের সম্ভাবনা বিকাশে সহযোগিতা করা।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজন টুডু, দপ্তর সম্পাদক মনিরুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ইমন পসনেম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রান্ত কুমার দাশ, আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক আরিফ মিয়া, কার্যকরী সদস্য মাহবুবা ইসলাম মেরিনা, রাসেল শেখ ও হিমেল আহমেদ হিমুসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা।
আলোচনা শেষে তরুণ নেতৃত্বের সামাজিক ভূমিকা নিয়ে উন্মুক্ত মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারীরা তাদের ভাবনা ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে যৌথ উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সভা শেষে উপস্থিত সবাই শুভসংঘের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃতভাবে প্রচার এবং মানবিক সমাজ গঠনে তরুণদের সম্পৃক্ত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বিডি-প্রতিদিন/আশফাক