১৪ নভেম্বর, ২০২২ ২৩:১২

রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে অখিলের কুরুচিকর মন্তব্যে ক্ষমা চাইলেন মমতা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে অখিলের কুরুচিকর মন্তব্যে ক্ষমা চাইলেন মমতা

মমতা ব্যানার্জি

ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বাহ্যিক রূপ নিয়ে গত শুক্রবার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন রাজ্যের কারাগার প্রতিমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি। এরপরই গত দুদিন ধরেই উত্তাল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতি।

ভারতের আদিবাসী সমাজ থেকে আসা প্রথম রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে এমন একটি মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে  একদিকে যেমন অখিল গিরিকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছে বিজেপি থেকে শুরু করে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষরা, তেমনি এ ঘটনার প্রতিবাদে দুই দিন ধরে বিক্ষিপ্তভাবে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, মিছিল সবকিছুই চলছে। অখিল গিরির বিরুদ্ধে একাধিক থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
 
এমনকি টিভি চ্যানেলগুলো কিংবা খবরের পাতা খুললেই শিরোনামে রয়েছে এই খবরটি।  স্বাভাবিকভাবে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। 

সোমবারও এই ইস্যুতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায় কলকাতায়। মন্ত্রী পদ থেকে অখিল গিরির অপসারণ চেয়ে এদিন বিকালে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যটির রাজ্যপাল লা গণেশনের সাথে দেখা করে বিজেপির এক প্রতিনিধি দল। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বাধীন ওই প্রতিনিধির দলে ছিলেন বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল প্রমুখ। 

পরে গণমাধ্যমের সামনে শুভেন্দু বলেন, ‘একজন মাতৃসমান নারীর প্রতি কদর্য ভাষায় রাজ্যের একজন মন্ত্রী কথা বললেন। এরপর ৭২ ঘণ্টা কেটে গেলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রাজ্যপালের কাছে তার বরখাস্তের জন্য সুপারিশ করেননি। তার মন্ত্রীকেও কোনো নির্দেশ দেননি। ফলে বাধ্য হয়ে আমরা রাজভবন এসে লিখিতভাবে একটা দাবি জানালাম।’

বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরাতেও। আগরতলায় রাজ্য বিজেপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ত্রিপুরা প্রদেশ জনজাতি মোর্চার নেতৃত্বরা অখিল গিরির পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কুশপুত্তলিকা দাহ করে। 

এমন এক পরিস্থিতিতে এই ইস্যুতে নীরবতা ভাঙেন মমতা ব্যানার্জি। সোমবার বিকালে রাজ্যের সচিবালয় নবান্নে সংবাদ সম্মেলন করে মমতা বলেন,‘রাষ্ট্রপতিকে আমরা সকলে শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি। তিনি ভীষণ সম্মানীয় একজন। তার সম্পর্কে অখিলের এই ধরনের মন্তব্য করা ঠিক হয়নি। আমরা একে নিন্দা করছি। দলের তরফেও তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। আমার ওর এই মন্তব্যকে সমর্থন করি না। ওকে বলে দেওয়া হয়েছে এই ধরনের মন্তব্য যেন আর না করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে রাষ্ট্রপতিকে সম্মান করি। আমি মনে করি, সৌন্দর্য কেবল রং বা দেখার মধ্যে হয় না। এটা হচ্ছে ভেতরের বিষয়। তিনি খুব সুন্দর ও মিষ্টি নারী। আমি তাকে খুব পছন্দ করি। কাজেই অখিল এটা খুব অন্যায় করেছে। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। দলের একজন বিধায়কের এই মন্তব্যের জন্য আমি সত্যিই খুব দুঃখিত। আমি এর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামের গোকুলনগরে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অখিল। তখন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর প্রসঙ্গ টেনে এনে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি। অখিল গিরিকে বলতে শোনা যায় ‘...কি রূপসী, দেখতে কী ভালো। আমরা রূপের বিচার করি না। তোমার রাষ্ট্রপতির চেয়ারকে সম্মান করি, কিন্তু তোমার রাষ্ট্রপতি কেমন দেখতে, বাবা?’  

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর