রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

এমএলএম কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল ক্ষমতা চায় রেজসকো

এমএলএম কোম্পানির নিবন্ধন বাতিলের ক্ষমতা চাচ্ছে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (রেজসকো)। ভুয়া এমএলএম কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য এই ক্ষমতা চাচ্ছে সংস্থাটি।

সূত্র জানায়, এ ধরনের কোম্পানিগুলো কার্যক্রম শুরুর আগে রেজসকো থেকেই নিবন্ধন নেয়। কিন্তু নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও বাতিলের ক্ষমতা নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির। আর এই সুযোগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতারণামূলক কার্যক্রম চালিয়ে মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে এই কোম্পানিগুলো।

জানা গেছে, এ পরিস্থিতিতে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি আইন যুগোপযোগী করার উদ্দেশ্যে এটি সংশোধনের জন্য একটি খসড়া পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য সুপারিশ করেছে সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। এ ছাড়া এমএলএম আইনেও অবৈধ কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নিবন্ধন বাতিলের ধারা যোগ করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, সারা দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১০০টি এমএলএম কোম্পানি তালিকাভুক্ত করেছে রেজসকো। এর মধ্যে ৩৭টি কোম্পানির ঠিকানা অনুযায়ী কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি তারা। তবে নিবন্ধন বাতিলের ক্ষমতা না থাকায় এসব কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধে তেমন কোনো উদ্যোগও নিতে পারেনি সংস্থাটি। ভুয়া এমএলএম কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম বন্ধে রেজসকো কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সে ব্যাপারে একাধিকবার জানতে চেয়ে চিঠি পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংসদীয় কমিটি থেকেও এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ ধরনের উদ্বেগের জবাবে রেজসকো বরাবরই জানিয়েছে, আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে তারা এমএলএম কোম্পানির বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারে না। কোম্পানির নিবন্ধন দেওয়ার মালিক হলেও বাতিলের মালিক নন তারা। সূত্র জানায়, ভুয়া কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক প্রতিবেদনে রেজসকোর নিবন্ধক বিজন কুমার বৈশ্য বলেন, কোম্পানি আইন অনুযায়ী ভুয়া এমএলএম কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে ৯০ দিনের মধ্যে পর পর দুইবার নোটিস দিতে হয়। এছাড়া এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি সীমাবদ্ধতা ছাড়াও সংস্থাটির জনবলের সীমাবদ্ধতার কথাও তুলে ধরেন তিনি। এদিকে সারা দেশে এমএলএম কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে রেজসকোর ভূমিকা জানতে চায় সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। গত ২ জুন অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির ওই সভায় বিজন কুমার বৈশ্য বলেন, কোম্পানি আইনবহিভর্ূত কাজ করার জন্য প্রয়োজনে নিবন্ধন বাতিলের সুপারিশ রয়েছে কমিটির। কিন্তু নিবন্ধন বাতিলের কোনো ক্ষমতা রেজিস্ট্রারের নেই। এ ক্ষমতা উচ্চ আদালতের হাতে। নিবন্ধন বাতিল করতে হলে রেজিস্ট্রারকে বাদী হয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করতে হয়। এ পরিস্থিতিতে সংসদীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ প্রচলিত আইনের সংশোধন করে এটিকে যুগোপযোগী করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এটি অতি পুরাতন ও সেকেলে আইন। এ বিষয়ে একটি যুগোপযোগী আইন করা প্রয়োজন। প্রসঙ্গত, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে এমএলএম কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন পিরামিডসদৃশ ব্যবসার নামে মাঠ পর্যায়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া বৃক্ষরোপণ প্রকল্প, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্প, ফার্মাসিউটিক্যাল প্রকল্প, এগ্রো প্রকল্প, আত্দকর্মসংস্থান প্রকল্প, অটোরিকশা প্রকল্প, সমন্বিত আবাসন প্রকল্প, প্রবাসী কল্যাণ প্রকল্প, ইলেকট্রনিঙ্ প্রকল্প, সুপারশপ প্রকল্প ও ফার্নিচার প্রকল্পসহ বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প তৈরি করে গ্রাহকদের অতি মুনাফার লোভ দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছে। বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে এরই মধ্যে ইউনি পে টু, ইউনিওয়ে, ন্যাচারাল হার্বস লিমিটেড, ফোর লাইফ কনসোর্টিয়াম প্রাইভেট লিমিটেড, ইজি-কম লিমিটেড, লোয়েড ভিশন প্রাইভেট লিমিটেড, মেগাপলিস লিমিটেডসহ বিভিন্ন কোম্পানি গা-ঢাকা দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর