বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

বিদ্যুৎ বাণিজ্যে যুক্ত হচ্ছে চার দেশ

নেপালের সঙ্গে হবে এমওইউ

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং যৌথ বিনিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটান এই চার দেশ যুক্ত হতে যাচ্ছে। গ্রিড কানেকটিভিটির মাধ্যমে এই চার দেশ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে একে অপরকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। এরই অংশ হিসেবে নেপালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আসছে ডিসেম্বরে কাঠমান্ডুতে দুই দেশের এই এমওইউ সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আর গ্রিড কানেকটিভিটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চার-দেশীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে শীঘ্রই বৈঠকের আয়োজন করা হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। এই বিদ্যুৎ আনা হবে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে। এরই মধ্যে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ত্রিপুরা থেকে আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। ভারতের খোলাবাজার থেকে আরও ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনা হবে। চাহিদার বাকি অংশ নেপাল ও ভুটান থেকে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে চার-দেশীয় গ্রিড কানেকটিভিটি বাস্তবায়ন করা হবে।
এই গ্রিড কানেকটিভিটির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা সম্পর্কিত সমঝোতা চুক্তির একটি খসড়া তৈরি হয়েছে। এটি নিয়ে আজ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি বৈঠক করার কথা রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের। বিশেষজ্ঞদের মতামতের পর খসড়াটি চূড়ান্ত করে নেপালে পাঠানো হবে। দেশটির সবুজ সংকেত পেলে এমওইউ সইয়ের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে। কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার বিষয়টি নিয়ে আগামী ডিসেম্বরে কাঠমান্ডুতে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ওই বৈঠকেই সই হতে পারে এ-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক। বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ হাজার ৬১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে প্রতিবছর ১১ থেকে ১২ শতাংশ হারে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২১ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। ২০৩০ সালে উৎপাদন করা হবে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর এ লক্ষ্যেই ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সহযোগিতা সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা চলছে। চলতি বছরের এপ্রিলে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে অনুষ্ঠিত সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দেশটি থেকে বিদ্যুৎ আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে নেপালের সঙ্গে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার বিষয়ে একমত হয় দুটি দেশ। বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম-সচিব আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের চাহিদা মেটাতে ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে যৌথ বিনিয়োগ কিংবা সরাসরি বিদ্যুৎ আমদানির মধ্য দিয়ে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনতে হলে গ্রিড কানেকটিভিটির জন্য ভারতের সহযোগিতা লাগবে। সে কারণে শীঘ্রই এ তিন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের এ কর্মকর্তা আরও জানান, চার-দেশীয় গ্রিড কানেকটিভিটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নেপালের সঙ্গে এমওইউ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুই দেশের সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নীতিগত সিদ্ধান্তেই এ প্রক্রিয়া চলমান।

খসড়া এমওইউতে যা আছে : নেপালের সঙ্গে এমওইউর খসড়ায় দুই দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন, গ্রিড কানেকটিভিটি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং জলবিদ্যুৎ উন্নয়নে পারস্পরিক সহায়তা ও যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, সক্ষমতা সাপেক্ষে দুই দেশ একে অপরের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিনিময় করবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতা অর্জনেও দুটি দেশের উদ্যোক্তারা একে অপরের সঙ্গে কাজ করবে। বিদ্যুৎ খাতে যৌথ বিনিয়োগের লক্ষ্যে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠন করা হবে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রূপ। এই গ্রূপ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সহায়তা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা এবং সমস্যাগুলো খতিয়ে দেখবে। এ গ্রূপের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন দুই দেশের বিদ্যুৎ সচিব। তবে এমওইউ হয়ে গেলেই নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা যাবে এমনটা মনে করছেন না বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার ক্ষেত্রে ভারতের করিডর ব্যবহারের বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভারত এ বিষয়ে সহযোগিতা করলেই ওই দেশ দুটি থেকে জলবিদ্যুৎ আনার বিষয়টি একটি অবস্থানে পৌঁছাবে। জানা গেছে, এ প্রসঙ্গে ভারতের সঙ্গে দরকষাকষির ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। কারণ পার্শ্ববর্তী এ দেশটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাংলাদেশে গ্রিড কানেকটিভিটি চেয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি অন কো-অপারেশন ইন পাওয়ার সেক্টরের সপ্তম বৈঠকে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ভারতকে ছয় হাজার মেগাওয়াট সঞ্চালন ক্ষমতার বিদ্যুৎ করিডর দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানা গেছে। অরুণাচল থেকে আসামের রাঙ্গিয়া বা রাউটা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে এ গ্রিড লাইন। আর বাংলাদেশের জামালপুর হয়ে দিনাজপুর দিয়ে ভারতের বিহারের বরাকপুরে গ্রিডলাইনটি পৌঁছবে। এই গ্রিড লাইনের মাধ্যমে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বিদ্যুৎ খাতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা সফল করার লক্ষ্যে সম্প্রতি ঢাকায় এসেছিলেন নেপালের জ্বালানিমন্ত্রী রাধা কুমার গাঙ্গুলি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে গাঙ্গুলি বলেন, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি আপাতদৃষ্টিতে দ্বিপক্ষীয় বিষয় মনে হলেও আসলে বিষয়টি ত্রিপক্ষীয়। কেননা এ বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে হবে।
এ ব্যাপারে নসরুল হামিদ ওই সময় বলেন, ‘গ্রিড কানেকটিভিটি নিয়ে আমরা আলোচনা শুরু করেছি। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন করা হবে। আমরা ভারতের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এভাবে বিদ্যুতের বিনিময় হচ্ছে। আমরাও চেষ্টা করছি বিদ্যুৎ-জ্বালানির বিনিময় বাড়াতে।’

সর্বশেষ খবর