রবিবার, ১ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি ঠেকাতে তৎপর গোয়েন্দারা

এনবিআরের জিরো টলারেন্স, ৮৭৯ কেজি সোনা উদ্ধার

চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি ঠেকাতে সারা দেশে জোর অভিযান চালাচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। সংস্থাটি সব ধরনের আমদানি পণ্যের শুল্ক ফাঁকি ধরতে এনবিআরের জিরো টলারেন্স নীতির আলোকে তৎপরতা চালাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে ৪১২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা মূল্যের ৮৭৯ কেজি ৪১৭ গ্রাম সোনা উদ্ধার, ২৫ হাজার ৫৭৯ কার্টন বিদেশি সিগারেট আটক, আমদানি পণ্যের মিথ্যা ঘোষণা চিহ্নিত করে ৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায়, ৩৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা মূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার, ১৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা মূল্যের ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য আটক ও ৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা মূল্যের নিষিদ্ধ ওষুধ আটক করেছে অধিদফতর।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশীয় উৎপাদনমুখী শিল্পের নিরাপত্তায় আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা ঠেকাতে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি শুল্ক ফাঁকি ও চোরাচালান দমনেও আমরা বদ্ধপরিকর।
জানা গেছে, চোরাচালান, শুল্ক ফাঁকি ও শুল্কমুক্ত পণ্য আমদানিতে বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধার আড়ালে যে অবৈধ কারবার চলছে, তা মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে সরকার। শতভাগ পুনঃরপ্তানির শর্তে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা পণ্য উৎপাদন কাজে ব্যবহার না করে তা হরহামেশায় খোলা বাজারে বিক্রি করছে কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ব্যবসায়িক চক্র ও প্রতিষ্ঠান। ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাজার এলাকায় যেসব দোকানে এসব অবৈধ পণ্যের ব্যবসা পরিচালিত হয়, তার একটি অংশই বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের মাধ্যমে আমদানি করা পণ্য। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অভিযানের মাধ্যমে নিয়মিত তদারকির ফলে স্থানীয় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেছেন, চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি বন্ধে কাস্টমসের নজরদারি বাড়াতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিগগিরই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের শুল্ক অব্যাহতির সুবিধা সঠিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে অভিযান চালানো হবে। অতি সম্প্রতি শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয় পরিদর্শন করতে গিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেছিলেন, উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে শক্তিশালী করা হবে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। রাজস্ব আদায়ে কারও ভয়ভীতি তোয়াক্কা করবে না রাজস্ব প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন নীতি অনুকরণ করা হবে। অপরাধের আগে প্রতিকার করতে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর আরও আধুনিকায়ন করা হবে। রাজস্ব প্রশাসনে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। এদিকে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের চলতি জানুয়ারি মাসের এক হালনাগাদ গোপন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সংস্থাটি বিগত ২০ মাসে ৪১২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা মূল্যমানের ৮৭৯ কেজি ৪১৭ গ্রাম সোনা আটক করেছে। এর মধ্যে গত বছর ২০১৪ সালে ৩০১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা মূল্যের ৬৪১ কেজি ৯০৮ গ্রাম সোনাসহ ৭৫ জন আসামিকে আটক করা হয়েছে। বিগত ২০ মাসে ৩৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা মূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রা, ১৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা মূল্যমানের ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য, ৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা মূল্যমানের আমদানি নিষিদ্ধ ওষুধ, ২৫ হাজার ৫৭৯ কার্টন বিদেশি সিগারেট এবং বিভিন্ন শুল্ক ভবন ও বন্দরের মাধ্যমে মিথ্যা ঘোষণায় আসা পণ্য আমদানি চিহ্নিত করে ৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। তবে এর আগে বিগত ২০০৪-০৫ থেকে ২০১৩-১৪ পর্যন্ত ৯টি অর্থবছরে মাত্র ৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা মূল্যের ১৭ কেজি ৪৬২ গ্রাম সোনা, ২২ কোটি ২ লাখ টাকা মূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রা, ২০ কোটি ১৬ লাখ টাকা মূল্যমানের ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য, ৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা মূল্যমানের আমদানি নিষিদ্ধ ওষুধ, ৩ হাজার ২৯৭ কার্টন বিদেশি সিগারেট, বিভিন্ন শুল্ক ভবন ও বন্দরের মাধ্যমে মিথ্যা ঘোষণায় আসা পণ্য আমদানি চিহ্নিত করে ২৫৪ কোটি ৭ লাখ টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।

সর্বশেষ খবর