বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

গাজীপুরের কাঁঠাল যাচ্ছে ১৫ দেশে

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

গাজীপুরের কাঁঠাল যাচ্ছে ১৫ দেশে

গাজীপুরের গ্রামগুলো এখন কাঁঠালে সয়লাব। যেদিকে চোখ যায় শুধু কাঁঠাল আর কাঁঠাল। বাড়ির উঠোন, ঘরের বারান্দা সবখানেই একই দৃশ্য। হাট-বাজারে বিক্রিও হচ্ছে দেদার। শুধু তাই-ই নয়, এ কাঁঠাল চলে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ ১৫টি দেশে। বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানি হচ্ছে গাজীপুরের কাঁঠাল।

খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, দেশে কাঁঠালের রাজধানীখ্যাত গাজীপুরের কাপাসিয়া ও শ্রীপুরে এবারও বাম্পার ফলন হয়েছে। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে রাজধানী ঢাকা ও দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে চাষিদের কাছ থেকে গাছ বা বাগান থেকে কাঁঠাল কিনছেন। তবে অভিযোগ পাওয়া গেছে, মধ্যস্বত্বভোগী বেপারি ও আড়তদারদের দৌরাত্ম্যে চাষিরা বরাবরের মতো এবারও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বিদেশে কাঁঠাল রপ্তানি সম্পর্কে গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি বাজারের আড়তদার নিজাম উদ্দিন জানান, শ্রীপুরের কাঁঠাল পৃথিবীর বহু দেশে রপ্তানি হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ ১৫টি দেশে যাচ্ছে নিয়মিত। তবে তার অভিযোগ, শ্রীপুরে কাঁঠাল সংরক্ষণের জন্য কোনো হিমাগার গড়ে ওঠেনি। স্রেফ সংরক্ষণের অভাবে প্রতি মৌসুমে লাখ লাখ টাকার কাঁঠাল নষ্ট হয়। ডুমবাড়ী চালার গৃহস্থ চাষি আলী আকবর বলেন, ‘কিষি অফিচারকে কত্ত কইছি। কোন কাম অয় নাই। এইহানে একখান হেমাগার খুব দরকার।’ একইভাবে হিমাগারের জন্য এমন আকুতি জানান বহু চাষি ও ব্যবসায়ী। কাপাসিয়ার ঘাগটিয়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম খিরাটী। এ গ্রামে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল উত্পাদিত হয়। মৌসুম শুরু হলে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের কাঁঠাল প্রেমী ও ব্যবসায়ীরা ছুটে আসেন এ গ্রামে। তাদের মাধ্যমে প্রতিদিন ট্রাক, পিকআপ ভরে বিমানবন্দর হয়ে বিভিন্ন দেশে চলে যায় কাঁঠাল। দেইলগাঁও এলাকার সহিদুল জানান, এ মৌসুমে তিনি ৭০ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করেছেন। গত বছর কাঁঠাল পচে যাওয়ায় বিক্রি করতে পেরেছিলেন মাত্র ১৪ হাজার টাকার। এবার কাঁঠালের ফলনও বেশি হয়েছে। আবহাওয়াও অনুকূলে। আরেক কৃষক আরমান জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর কাঁঠাল বিক্রি থেকে আয় হয়েছে বেশি। তাই এবার কাঁঠাল বিক্রির টাকায় ধূমধাম করে একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেবেন। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, প্রতি মৌসুমে শ্রীপুরের জৈনা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ চারলেন মহাসড়কের দুপাশে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাঁঠালের হাট বসে। এ ছাড়া কাপাসিয়ার ১১ ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে প্রতিদিনই কাঁঠালের হাট বসছে। কাঁঠালকে ঘিরে কাপাসিয়া ও শ্রীপুরের বিভিন্ন স্থানে অন্তত তিন শতাধিক হাট পরিচালিত হচ্ছে।  কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁঠাল চাষের জন্য যে মাটি ও আবহাওয়া প্রয়োজন তার সবই কাপাসিয়া ও শ্রীপুরের সব ইউনিয়নে বিদ্যমান। ফলে চাষিরা কাঁঠালকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে উঁচু জমিতে প্রতি বছরই নতুন নতুন বাগান সৃষ্টি করছেন। এ এলাকা বন্যামুক্ত হওয়ায় কাঁঠাল চাষ করা সহজ হয়। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে উপজেলার কৃষকরা ইরি-বোরো ধানকাটা আরম্ভ করেন। ধান কাটা শেষ না হতেই কাঁঠাল বিক্রির মৌসুম শুরু হয়। কাপাসিয়ার প্রতি ঘরে ঘরে তখন আনন্দের বন্যা বইতে থাকে।

স্থানীয়রা জানান, কাপাসিয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৩২টি হাট-বাজারে মৌসুমি ফল বিক্রির জন্য আলাদা কোনো বাজার বা স্থান না থাকায় কৃষকদের সমস্যা হচ্ছে। হয়রানিরও শিকার হতে হয়। খোদ কাপাসিয়া সদর বাজারে বসে উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার। অথচ এখানে আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। বাজারের এ সমস্যার ফলে কৃষকরা তাদের উত্পাদিত কাঁঠাল বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে প্রকৃত মূল্য থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। ফড়িয়ারা বাজার মূল্যের চেয়ে কমমূল্য দিচ্ছে। কৃষকরাও বাধ্য হচ্ছেন অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে বিক্রি করতে। কাঁঠাল চাষিরা এ প্রতিবেদককে জানান, উপজেলার অন্যতম অর্থকরি ফসল এই কাঁঠাল। অথচ কাঁঠাল চাষের ব্যাপারে নেই কোনো সরকারি উদ্যোগ। নেই কোনো ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা। সরকারিভাবে যদি কাঁঠাল চাষ বৃদ্ধির ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে আরও বেশি ফলন পাওয়া যেত।

সর্বশেষ খবর