শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা
ইফতার বাজার

সম্প্রীতির নজির বৌদ্ধ ভিক্ষুদের

বাদল নূর

সম্প্রীতির নজির বৌদ্ধ ভিক্ষুদের

ভিক্ষুক, রিকশাচালক, দিনমজুর, ঠেলা গাড়ি চালক, রাজমিস্ত্রি, বস্তিবাসী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ভবঘুরে, ফকির, মিসকিনদের মধ্যে ইফতার বিতরণের মধ্যদিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন রাজধানীর বাসাবো সবুজবাগে অবস্থিত ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মন্দিরের ভিক্ষুরা। হাতে একটি টোকেন নিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যান রোজাদার দরিদ্র নারী-পুরুষ ও শিশুরা। একে একে তাদের হাতে ইফতারির প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়। এ মন্দির থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ জনের মধ্যে ইফতার বিতরণ করছেন। মানবতার সেবায় এখানে ৪০ জন বৌদ্ধ ভিক্ষু নিয়োজিত রয়েছেন। মন্দিরেই অবস্থিত রান্নাঘরে বেগুনি, আলুর চপ, পিয়াজু, ছোলা, মুড়ি, বুট ও জিলাপি তৈরি করা হয়। মন্দিরের সামনে অবস্থিত হারুন হোটেল পুরো ইফতার বানানোর কাজ তদারকি করছে। প্রতিদিন সকালে মন্দির থেকে হারুন হোটেলের ম্যানেজার কৃষ্ণপদ সাহাকে টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। প্রতি প্যাকেটে প্রায় পঞ্চাশ টাকার মতো ইফতার থাকে। মন্দিরের উপপ্রধান বুদ্ধপ্রিয় মহাথেরো গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখানে ধর্মের কোনো ভেদাভেদ নেই। সৌহার্দ-সম্প্রীতিটাই আসল কথা। কে বৌদ্ধ, কে মুসলিম, কে হিন্দু-খ্রিস্টান সেটা যার যার ধর্মে। গত ছয় বছর ধরে রোজার মাসে এই মন্দির থেকে ইফতারি দেওয়া হচ্ছে। মানবসেবা মহত কাজ। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এ আয়োজন। রোজাদারদের মধ্যে ইফতার বিতরণ করে আমরা খুব আনন্দ পাই, শান্তি পাই। অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে আমরা এটি করি। তিনি আরও বলেন, সবার উপরে মানুষ সত্য বলে আমরা মনে করি। বৌদ্ধদের মধ্যে বিত্তশালীদের প্রদান করা অর্থে এ ইফতারের টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ মন্দিরে ৪০ জন বৌদ্ধভিক্ষু অবিবাহিত। তাদের ধর্মে সংসার ধর্ম করলে বৌদ্ধভিক্ষু হওয়া যাবে না। তাই তারা ব্যক্তি জীবনের সুখ-শান্তি বিষর্জন দিয়েছেন। পুরো জীবনটা মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন তারা। তারই ধারাবাহিকতায় এই ইফতার আয়োজন। মানবতার সেবাই সবচেয়ে উত্তম ধর্ম। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই পবিত্র রমজান মাসে রোজাদারদের ইফতার বিতরণ করা হয় বলে জানান বৌধভিক্ষুরা। গতকাল বৌদ্ধ মন্দিরে ইফতার নিতে আসেন ইসমাইল, ফরহাদ, আবদুর রহমান, ময়ফুল বেগম, হাসিনা, রিয়া রহমান, আমেনা, ফজলুর রহমান, গুলবাহার, জরিনা, মাহফুজা, আলেয়া ও আমেনা। এদের মধ্যে কেউ বাসা-বাড়িতে কাজ করেন কেউ রিকশা চালান, কেউবা রাজমিস্ত্রি অবার কেউ ঠেলা ঠেলেন। প্রায় প্রতি বছরই তারা এখানে ইফতার নিতে আসেন বলে জানান। ১৯৬০ সালে বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।

সর্বশেষ খবর