রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কারাগার থেকে জঙ্গি নেতাকে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ফাঁস

আনসারুল্লাহর দুই সদস্য গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গাজীপুর প্রতিনিধি

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টানা জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মধ্যেই সক্রিয় নিষিদ্ধ উগ্রপন্থি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)। কাশিমপুর কারাগারে হামলা চালিয়ে জঙ্গি নেতাকে ছিনতাই করে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিল সংগঠনটি। কিন্তু সংগঠনের দুই সদস্য গ্রেফতারের পর হামলার পরিকল্পনা ফাঁস।

র‌্যাব জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে র‌্যাব-১-এর একটি দল গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকা থেকে এবিটির সক্রিয় সদস্য রাশেদুল ইসলাম ওরফে স্বপন ও বিপ্লব হোসেন ওরফে হুজাইফাকে গ্রেফতার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে হামলার পরিকল্পনার কথা জানতে পারে র‌্যাব। এর পরই গোটা কাশিমপুর এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়।

গতকাল সকালে উত্তরায় র‌্যাব-১-এর সদর দফতরে ওই দুজনকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে র‌্যাব-১ অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মাসুদ জানান, গ্রেফতার রাশেদুল এবিটির গাজীপুর জেলার সমন্বয়ক। বিপ্লব হোসেন তার সহযোগী। র‌্যাব জানিয়েছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম কাশিমপুর কারাগারে হামলা চালিয়ে তাদের আদর্শিক নেতা জসিম উদ্দিন রাহমানীকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছিল। পাশাপাশি তারা খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১০ লাখ মানুষকে এবিটির সদস্য করার টার্গেট নিয়েছে। র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, এবিটির একটি গ্রুপ আদর্শিক নেতাসহ কারাবন্দী অপর সহযোগীদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার পাশাপাশি নতুন করে টার্গেট কিলিংয়েরও প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ জন্য আলোচিত ব্লগার ও তাদের দৃষ্টিতে নাস্তিকদের তালিকা ধরে হত্যার পরিকল্পনা ছিল। এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে এবিটির বর্তমান সদস্যরা অন্য জঙ্গি গ্রুপগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করে যৌথ হামলার পরিকল্পনা আঁটে।

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে এবিটির অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক তামিম আল-আদনানি বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন বলে গ্রেফতার দুজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। আদনানির নির্দেশে তারা দেশে অন্তত ১০ লাখ লোককে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য করার প্রধান ও মুখ্য পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। তারা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার (একিউআইএস) অনুকরণে দেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য এসব পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলেন।  গ্রেফতার রাশেদুল র‌্যাবকে জানান, গত বছর তিনি কয়েক সহযোগী নিয়ে আব্বাসের মাধ্যমে আল-কায়েদার আইমান আল জাওয়াহিরির নামে বাইয়াত নেন। এর পরই গাজীপুর ও আশপাশ এলাকা থেকে কর্মী সংগ্রহ শুরু করেন এবং ওই এলাকার সাংগঠনিক দায়িত্ব পান তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার দুজন জানান, তারা একিউআইএসের মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। জসিম উদ্দিন রাহমানীকে মুক্ত করতে তারা কাশিমপুর এলাকায় কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গে সমন্বয় করছিলেন এবং সুযোগ পেলে হামলা করবেন বলে অপেক্ষায় ছিলেন। বিকল্প হিসেবে তারা রাহমানী এবং অন্য এবিটি নেতারা আদালতে হাজিরা দিতে এলে রাস্তায় হামলা করে তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাও করেন। এ ছাড়া টার্গেট কিলিংয়ের জন্য তারা বিভিন্ন আলোচিত ব্লগার ও নাস্তিকদের হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। এ কাজগুলো সম্পূর্ণ নিশ্চয়তার সঙ্গে করার জন্য তারা অন্যান্য জঙ্গি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে এক হয়ে কাজ করারও চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা নিয়মিত মিটিং এবং সাংগঠনিক বিষয়ে পরামর্শ করতেন। তাদের দেওয়া তথ্য তুলে ধরে র‌্যাব কর্মকর্তা মাসুদ বলেন, তাদের প্রধান ও মুখ্য পরিকল্পনা হলো বাংলাদেশে কমপক্ষে ১০ লাখ লোককে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য করে দেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা।

সর্বশেষ খবর