রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এক বোর্ডের অধীনে একীভূত হচ্ছে ১৪ হাজার কওমি মাদ্রাসা

পাল্টে যাবে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দেশের ১৪ হাজার কওমি মাদ্রাসা এক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে একীভূত হচ্ছে। একই বোর্ডের অধীনে একীভূত হয়ে নেওয়া হবে কওমি মাদ্রাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতি। এরই মধ্যে সব কওমি মাদ্রাসাকে একীভূত করতে উদ্যোগ নিয়েছেন কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল অ্যারাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) সভাপতি ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী। এ নিয়ে দেশের শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে পরামর্শ করতে আগামী ১৭ অক্টোবর জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনের আয়োজনও করা হয়েছে। সরকারি স্বীকৃতি নেওয়ার বিষয়ে সবাই ঐকমত্য হলে কিছু প্রস্তাবনাসহ সরকারকে সনদ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

বেফাক সভাপতি আল্লামা আহমদ শফী বলেন, আমরা কওমি সনদের স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করছি তবে বিদ্যমান শিক্ষানীতি, স্কুল পাঠ্যবই ও প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের বিষয়ে আমাদের যৌক্তিক দাবি পূরণকে প্রাধান্য দিতে চাই। সরকারি সনদ নিতে সম্মিলিতভাবে এমন একটি নীতিমালা তৈরি করার চেষ্টা করছি। যে নীতিমালার আলোকে সরকার যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কওমী সনদের স্বীকৃতি দিতে চায়, আমরা তা গ্রহণ করব। তবে স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে সনদের স্বীকৃতি নেব না। জানা যায়, বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসা রয়েছে ১৪ হাজারের অধিক। যার মধ্যে সাড়ে ১২ হাজার পুরুষ এবং দেড় হাজারের বেশি মহিলা মাদ্রাসা। যাতে লেখাপড়া করছেন প্রায় ১১ লাখ শিক্ষার্থী। মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছে ৭৪ হাজারের অধিক। এসব কওমী মাদ্রাসা পরিচালিত হয় ছোট-বড় কমপক্ষে ২৫টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন। এসব কওমী শিক্ষা বোর্ডের অন্যতম হলো বেফাক, কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা পরিষদ, আঞ্জুমানে ইত্তিহাদিল মাদারিস, তানজিমুল মাদারিস, এদারায়ে তালিমিয়া দীনি বোর্ড, আজাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম সিলেট, মাদারিসিল কওমীয়া বাংলাদেশ, কুমিল্লা তানযীমুল মাদারিস, দক্ষিণ ঢাকা এদারা, কওমী মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদ, দ্বীনি শিক্ষা বোর্ড, বেফাকুল মাদারিস কওমীয়া, ইলহাকুল মাদারিস। আলাদা বোর্ড থাকলেও তা সরকার স্বীকৃত নয়। তাই কওমী মাদ্রাসা থেকে ‘ফারেক’ বা ডিগ্রিধারী হয়েও কেউ সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদনের সুযোগ পান না। একই সঙ্গে বঞ্চিত হন অন্য সুযোগ-সুবিধা থেকেও। স্বীকৃতি মিললে পাল্টে যাবে কওমী মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন।  বেফাক সভাপতির প্রেসসচিব মাওলানা মুনির আহমদ বলেন, সনদ ইস্যুসহ যে  কোনো নীতিগত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সব কওমী মাদ্রাসা যাতে একই অবস্থান বজায় রাখে, সে বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বেফাক সভাপতি। এ বিষয়ে শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে পরামর্শ করতে ১৭ অক্টোবর জাতীয় ওলামা-মাশায়েক সম্মেলন আয়োজন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্মেলন থেকেই সনদ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কওমী মাদ্রাসা ছাত্র পরিষদ-চট্টগ্রামের প্রধান উপদেষ্টা আ ন ম মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, আমরা কওমী মাদ্রাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতি নিতে চাই। এতে লাখ লাখ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। ২০১২ সালে ‘বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন’ গঠন করে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। তখন বেফাকের চেয়ারম্যান আল্লামা আহমদ শফীকে প্রধান করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশনও গঠন করে সরকার। প্রায় পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও সরকারি স্বীকৃতি নেওয়ার বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী ছিল না কওমী মাদ্রাসাসমূহ। কওমী শিক্ষা কমিশন গঠনের জন্য আইনের খসড়া অর্থ, জনপ্রশাসন এবং প্রশাসনিক সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় অনুমোদন শেষে মন্ত্রিসভার বৈঠকও উত্থাপিত হয়। কিন্তু খসড়াটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ফেরত পাঠানো হয়। এরপর থমকে যায় কমিশনের কার্যক্রম।

সর্বশেষ খবর