সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বঙ্গোপসাগরে ঢুকতে চায় রাশিয়াও

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন ও জাপানের পর এবার বঙ্গোপসাগর নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে আরেক পরাশক্তি রাশিয়া। দেশটি তার জাহাজ নিয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার চাইছে। এ জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে মেরিটাইম চুক্তির প্রস্তাব পাঠিয়েছে তারা। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে এরই মধ্যে চুক্তির একটি খসড়াও পাঠিয়েছে রাশিয়া। ‘কো-অপারেশন ইন দ্য ফিল্ড অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট’ শীর্ষক এই চুক্তি কার্যকর হলে যুদ্ধজাহাজ এবং সরকারের অ-বাণিজ্যিক কার্যক্রমে পরিচালিত জাহাজ, প্রমোদতরী ও ক্রীড়া ভ্যাসেল ব্যতীত রাশিয়ার সব ধরনের জাহাজ বঙ্গোপসাগরে ঢুকতে পারবে। এসব জাহাজ বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অবাধ সুযোগ পাবে। অবশ্য চুক্তির শর্তানুযায়ী বাংলাদেশও রাশিয়ায় একই ধরনের সুবিধা লাভ করবে।

ব্লু ইকোনমি এবং মেরিটাইম বিষয়ে এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। আগ্রহ আছে প্রভাবশালী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানেরও। উপরন্তু এ বিষয়ে এমওইউ স্বাক্ষরের প্রস্তাব পাওয়া গেছে চীনের কাছ থেকেও। এ ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের ব্যাপারেও প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। বঙ্গোপসাগর ঘিরে শক্তিশালী দেশগুলোর বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ও সম্পর্কোন্নয়নে এই আগ্রহের বিষয়টিকে অবশ্য ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন সরকারের নীতি নির্ধারকরা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চীন ছাড়াও রাশিয়ার পক্ষ থেকে মেরিটাইম সহায়তার বিষয়ে চুক্তির প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। জানা গেছে, মেরিটাইম চুক্তি বিষয়ে রাশিয়ার খসড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ সেপ্টেম্বর নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর এম জাকিউর রহমান ভূঁইয়া নৌপরিবহন সচিব অশোক মাধব রায়ের কাছে একটি চিঠি পাঠান। সাত পৃষ্ঠার মতামতসহ ওই চিঠিতে আগামী ১০ থেকে ২০ বছরে মেরিটাইম উন্নয়নে বাংলাদেশের কী কী উপকরণ লাগবে সে বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম, মংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষের মতামত নেওয়ার সুপারিশ করেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে সচিব অশোক মাধব রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আমাদের সামুদ্রিক সম্পর্ক আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে চাই। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে আমরা যে কোনো দেশের সঙ্গে মেরিটাইম চুক্তি করতে আগ্রহী। রাশিয়া যে চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে তাতে (আর্টিকেল-৮) উল্লেখ আছে, দুই দেশের মধ্যে একটি দেশের ‘ট্রান্সপোর্ট’ তৃতীয় কোনো দেশে অবস্থানরত ওই দেশের জাহাজ বহরে যোগ দেওয়ার জন্য অথবা জাহাজ পরিবর্তনের জন্য অথবা অন্য কোনো প্রয়োজনে ট্রানজিট সুবিধায় আরেক দেশের ‘টেরিটরি’ ব্যবহারের সুযোগ পাবে। শুধু তাই নয়, এ ধরনের টেরিটরি সুবিধা নেওয়ার সময় জাহাজে অবস্থানকারী নাবিকগণ চুক্তিবদ্ধ দেশের বন্দর সংলগ্ন শহরে বিনা ভিসায় অবস্থান করতে পারবে। এমনকি এ অবস্থায় কোনো নাবিক অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসাকালে তাকে/তাদের অবস্থানের সুযোগ অথবা সংশ্লিষ্ট নাবিক বা নাবিকদের অন্য কোনো দেশে নেওয়ার প্রয়োজন পড়লে সীমানা পেরুনোর সুযোগ দিতে বাধ্য থাকবে। একটি দেশের জাহাজ চুক্তিবদ্ধ অপর দেশের সীমানায় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা সমস্যার পড়লে স্বাগতিক দেশ সব ধরনের সহায়তা দেবে। আর এ ধরনের সহায়তার সময় জাহাজ অবস্থানকালীন সময়ে কোনো ধরনের শুল্ক বা সার্ভিস চার্জ অন্য কোনো ধরনের করারোপ করা যাবে না। চুক্তির লক্ষ্য সম্পর্কে শুরুতেই বলা আছে (আর্টিকেল-১) : বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দুই দেশের মধ্যে সমুদ্র সম্পর্কিত সম্পর্কের উন্নয়ন করা, দ্বিপক্ষীয় জাহাজ চলাচলে কার্যকর সহযোগিতা গড়ে তোলা এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে অবদান রাখাই এ চুক্তির লক্ষ্য।

সর্বশেষ খবর