জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত, চিকিৎসক ও রোগী এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করতে একটি পূর্ণাঙ্গ আইনের সুপারিশ প্রস্তুত করেছে আইন কমিশন। প্রস্তাবিত আইনে চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়েও প্রতিকার থাকছে। এ লক্ষ্যে জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়াও জেলা পর্যায়ে জেলা স্বাস্থ্যসেবা বিরোধ নিষ্পত্তি ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই ট্রাইব্যুনালের ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার এখতিয়ার থাকবে। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কর্মচারীদের যে কোনো ধরনের সংগঠন সৃষ্টিকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা, অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত ও জরিমানা করতে পারবে। এই আদেশের বিরুদ্ধে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিরোধ নিষ্পত্তি আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করা যাবে। ২০ লাখ টাকার বেশি দাবিকৃত ক্ষতিপূরণের অভিযোগ, জেলা স্বাস্থ্যসেবা বিরোধ নিষ্পত্তি ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল নিষ্পত্তির এখতিয়ার এই ট্রাইব্যুনালের থাকবে। জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিরোধ নিষ্পত্তি আপিল ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে। জেলা স্বাস্থ্যসেবা বিরোধ নিষ্পত্তি ট্রাইব্যুনাল ও জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিরোধ নিষ্পত্তি আপিল ট্রাইব্যুনাল হয়রানিমূলক অভিযোগের আবেদনকারীকেও জরিমানা করতে পারবে। ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে প্রচলিত ফৌজদারি আইনে প্রতিকার চাইতে বাধা নেই। আইন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক এম শাহ আলম বলেন, স্বাস্থ্যসেবা আইন-২০১৬ এর খসড়া সুপারিশ আকারে প্রস্তুত করা হয়েছে। আইন কমিশন থেকে এটি বিবেচনার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর আনুষ্ঠানিক উদ্যোগও ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। জানা গেছে, প্রস্তাবিত আইনে ৬৯টি ধারা রয়েছে। প্রথম পরিচ্ছেদে চিকিৎসা সম্পর্কিত বিভিন্ন পরিভাষা ও প্রাসঙ্গিক আইনের সংজ্ঞা দেওয়ার পর দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে রোগীর অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সবিশেষ তুলে ধরা হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে চিকিৎসকের পরিচয় ও পদবি জানা, চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা, তবে আইনগত, চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা বা অন্য রোগীর চিকিৎসায় প্রয়োজন হলে গোপনীয়তা রক্ষার প্রয়োজন নেই। রোগী নিজে চিকিৎসক ও নার্স পছন্দ করতে পারবেন। দ্বিতীয় মত নিতে রোগী অন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবেন। চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, শিক্ষা, আর্থিক অবস্থা, পেশা, পদবি ইত্যাদি কারণে বৈষম্য করা যাবে না। প্রতিটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে মর্টালিটি, ক্লিনিক্যাল ও মর্বিডিটি অডিটের ব্যবস্থা থাকতে হবে। চিকিৎসায় অবহেলা বা অসদাচরণের শিকার রোগী বা তার আইনানুগ প্রতিনিধি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষতিপূরণ পাবে। চিকিৎসা সংক্রান্ত সব লেনদেনের রশিদ রোগী পাবে। আইনের ৯ ধারায় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারীর দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে। চিকিৎসার ব্যাপারে চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলা, চিকিৎসক ও সহায়ক কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ না করা, চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের পাওনা পরিশোধ, যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কোনো ক্ষতি না করা। তৃতীয় পরিচ্ছেদে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগীর অতিরিক্ত রোগী পরীক্ষা না করার অধিকার সরকারি চিকিৎসকের থাকবে। এই পরিচ্ছেদে চিকিৎসকের ১৫টি দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে। এর মধ্যে মারাত্মকভাবে সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে সম্মতির অপেক্ষা না করেই চিকিৎসা শুরু করা, রোগী বা তার অভিভাবককে রোগীর অবস্থা, চিকিৎসা পদ্ধতি, সম্ভাব্য ঝুঁকি, চিকিৎসার ব্যয় ইত্যাদি বিষয় অবহিত করা। যথাযথ চিকিৎসা প্রদানে অসমর্থ হলে অবিলম্বে উপযুক্ত চিকিৎসক বা প্রতিষ্ঠানে রেফার করা, রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা, মাদকাসক্ত বা অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন না করা, রোগী বা তার প্রতিনিধির চাহিদামতো নিজ নাম, পরিচয় ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রদান করা, অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশের পূর্বে রোগীর ফিটনেস রিপোর্ট লিপিবদ্ধ করা, আবশ্যিকভাবে নিজের ইনডেমনিটি ইনস্যুরেন্স করা, প্রতিটি চিকিৎসার ক্ষেত্রে নির্ধারিত প্রটোকল মেনে চলা ইত্যাদি। চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব সম্পর্কে ১৪ ধারায় বলা হয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি দ্বারা রোগ নির্ণয়, নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে চিকিৎসা সরঞ্জামাদির ক্রমাঙ্কন, মুমূর্ষু ও সংকটাপন্ন রোগীর জরুরি চিকিৎসা প্রদান, যথাযথ চিকিৎসা প্রদান সম্ভব না হলে বা ব্যর্থ হলে অবিলম্বে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন প্রকার প্যাথলজিক্যাল টেস্টের ফি, চিকিৎসকের ফি, ওয়ার্ড বা কেবিনের দৈনন্দিন শয্যা ভাড়া, বিভিন্ন প্রকার অপারেশন ফি ইত্যাদির তালিকা দৃশ্যমান স্থানে টাঙিয়ে রাখা, রোগীর রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ইমেজিং সংক্রান্ত সব তথ্য সংরক্ষণ ও রোগী বা আদালতের চাহিদামতো তা সরবরাহ করা ইত্যাদি। ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, রোগী, তার অভিভাবক বা প্রতিনিধির মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদানকারী বা প্রতিষ্ঠানের কোনো ক্ষতি করা হলে তারা ক্ষতিপূরণসহ প্রতিকার প্রাপ্তির অধিকারী হবে। পঞ্চম পরিচ্ছেদে চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও সরকারের অবহেলা এবং এর থেকে উদ্ভূত ক্ষতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। চিকিৎসকের অবহেলা বলতে ভুল চিকিৎসা, রোগ নির্ণয়ে ভুল, ভুল ওষুধ প্রদান, ভুল অঙ্গ অপসারণ, ভুল বা অতিরঞ্জিত রিপোর্ট প্রদান, অপ্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল ও ডায়াগনস্টিক টেস্ট দেওয়া, ব্যবস্থাপত্রে অপ্রয়োজনীয় ও বিভিন্ন কোম্পানির একই ওষুধ বারবার দেওয়া, কর্মস্থলে বিলম্বে আসা ও কর্মঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই কর্মস্থল ত্যাগ করা, চিকিৎসকের কাজ নিজে না করে নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয় দ্বারা করানো, মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভকে নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে সাক্ষাৎ দেওয়া ইত্যাদি। চিকিৎসা সহায়ক কর্মচারীদের অবহেলা এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের অবহেলা নিয়েও নির্দেশনা থাকছে। চিকিৎসা সেবায় অবহেলাজনিত ক্ষতি যেমন— শারীরিক ক্ষতি, স্বাভাবিক জীবন-যাপনে অসমর্থতা, মানসিক ক্ষতি, আর্থিক ক্ষতি-চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি, চাকরি হারানো, ব্যবসায় লোকসান ইত্যাদি ও সামষ্টিক ক্ষতির বিষয়েও নির্দেশনা থাকছে আইনে। ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে দাবি, অভিযোগ, তদন্ত ও প্রতিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে। রোগী বা তার বৈধ প্রতিনিধি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স, সহায়ক কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পেশাগত অবহেলা ও ক্ষতি সম্পর্কে আর্থিক ক্ষতিপূরণ চেয়ে সংশ্লিষ্ট যুগ্ম জেলা জজের কাছে অভিযোগ দাখিল করতে পারবে। ৪৮(২) ধারায় নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
শিরোনাম
- ‘একটি দল ক্ষমতায় যেতে প্রলাপ বকছে’
- সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাশে থাকবে চীন
- বগুড়ায় কোলগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান
- শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে যা বলল ভারত
- মোংলায় জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ বিষয়ক সমন্বয় সভা
- আকাশ প্রতিরক্ষা ও যুদ্ধবিমান চুক্তি চূড়ান্ত করতে ফ্রান্সে জেলেনস্কি
- অস্ট্রেলিয়ায় বিএনপির জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন
- ভারতের চা, মশলা, আমসহ কয়েকটি পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার করলেন ট্রাম্প
- নওগাঁর মান্দায় ধানের শীষে ডা. টিপুর নির্বাচনী পথসভা
- পাঙ্গাস পোনা শিকারের দায়ে জেলের কারাদণ্ড
- পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মিলন কারাগারে
- রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
- নির্বাচনের আগেই হাসিনাকে দেশে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবি সারজিসের
- কলাপাড়ায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ৫ জন হাসপাতালে
- দিনাজপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবারের মাঝে উপকরণ বিতরণ
- মুন্সীগঞ্জে পদোন্নতির দাবিতে প্রভাষকদের ‘নো প্রমোশন, নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি
- এ রায় প্রতিশোধ নয়, ন্যায়বিচারের প্রতিজ্ঞা: চিফ প্রসিকিউটর
- ১৬ কোটি টাকার হাসপাতাল চার বছরেও চালু হয়নি
- আমি আসলে খুব কষ্ট পাচ্ছি : শেখ হাসিনার আইনজীবী
- বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবরে সেই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু
আইনের আওতায় আসবে হাসপাতাল
অবহেলা-ভুল চিকিৎসায় শাস্তির বিধান
আহমেদ আল আমীন
প্রিন্ট ভার্সন
এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর