একুশের প্রথম প্রহরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শহীদ বেদিতে উঠে যাওয়ার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভাষার প্রতিও বিএনপি নেত্রীর এতটুকু সম্মান নেই। গতকাল বিকালে রাজধানীর খামারবাড়ীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। আলোচনা সভার শুরুতেই সব ভাষা শহীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শহীদ মিনারের যে স্থানটিতে রাষ্ট্রপতি ফুল দিয়েছেন, আমি দিলাম, স্পিকার দিলেন, যেখানে সবাই ফুল দিলেন; সেই স্থান মাড়িয়ে বিএনপি নেত্রী দলবল নিয়ে উঠে গেলেন। বেদি ছেড়ে উনি কোথায় ফুল দিলেন? নিজের পায়ে কি ফুল দিলেন? তিনি বলেন, মধ্যরাতে বেরোনোর কারণে উনি (খালেদা জিয়া) বেতালা থাকতে পারেন। কিন্তু তার দলের নেতারা তো তাকে শ্রদ্ধা নিবেদনের ঠিক জায়গাটা দেখিয়ে দেবেন। তার সঙ্গে দলের নেতারাও মধ্যরাতে বেতালা ছিলেন কিনা জানি না। যেখানে সবাই শ্রদ্ধা জানালেন, বিএনপি নেত্রী তার ওপর উঠে শহীদের মর্যাদা ও পবিত্রতা নষ্ট করে দিয়ে আসলেন। শেখ হাসিনা বলেন, এরা (বিএনপি) দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। এরা দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কীভাবে উপলব্ধি করবেন। এদের মন তো স্বাধীন বাংলাদেশে নেই। এদের মন পড়ে থাকে হাজার মাইল দূরের পেয়ারের পাকিস্তানে। এ কারণেই শহীদ মিনারে কোথায় ফুল দিতে হয় তা তারা জানেন না। তিনি বলেন, যারা (বিএনপি-জামায়াত) দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না, বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানায়, আন্দোলনের নামে মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে, তাদের কাছে দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের কোনো মূল্য থাকতে পারে না। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন, এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। অথচ দেশের একজন প্রতিষ্ঠিত নেত্রী, যিনি দুবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) পাকিস্তানের সুরে সুরে বলেন, ৩০ লাখ মানুষ নাকি মারা যায়নি! পাকিদের প্রতি তার কত প্রেম তা দেখুন। দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শ মেনে জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ যে আদর্শ নিয়ে স্বাধীন হয়েছে, সেই আদর্শ সবাইকে ধারণ করে দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। কী পেলাম বা কী পেলাম না, সেটি বড় কথা নয়। বরং দেশ ও দেশের মানুষকে কী দিতে পারলাম সেটিই বড় কথা। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। আমি এবং আমার পরিবারই ছিল সেই ষড়যন্ত্রের মূল লক্ষ্য। তবে সততার শক্তি ছিল বলেই আমরা সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পেরেছি। আজ তা প্রমাণিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ ও দেশের মানুষের সম্মান এতটুকু ক্ষুণ্ন হয় তা আমার এবং আমার পরিবারের দ্বারা কখনো হবে না। বাংলাদেশ যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ও অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে, কোনো শক্তিই তা আর পেছনের দিকে টেনে ধরতে পারবে না। তিনি বলেন, জাতির দুর্ভাগ্য, ’৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারীরা বাঙালি জাতিকে বিশ্বের কাছে ভিক্ষুকের জাতি জানিয়ে ভিক্ষা এনে নিজেদের পকেট ভারী করেছে। বাঙালির কঙ্কালসার দেহ দেখিয়ে নিজেরা সাহায্য এনে নাদুসনুদুস হয়েছে। বিশ্বের কাছে আমাদের দেশের মানুষকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল যে, তারা নিজেরা কিছু করতে পারে না, শুধু ভিক্ষা করে খায়। শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালিরা যে সবই পারে আমরা তা প্রমাণ করেছি। তাই দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি, খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তুলেছি। আমরা কারোর কাছে হাত পাতব না। মাথানত করব না। সেভাবেই দেশকে আমরা গড়ে তুলছি। বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এরা কখনই দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানায়। মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে। শত শত পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ানো, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করাই হচ্ছে বিএনপির আসল চরিত্র। তিনি বলেন, যাদের মধ্যে ন্যূনতম মনুষ্যত্ববোধ নেই, তাদের কাছ থেকে জাতি ভাষা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের কী আশা করতে পারে! প্রধানমন্ত্রী পুনর্বার বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার ও উচ্চারণে দেশের নতুন প্রজন্মকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মাতৃভাষায় যেভাবে শিক্ষা গ্রহণ করা যায়, অন্য কোনো ভাষায় তা হয় না। তবে গোটা বিশ্বই এখন গ্লোবাল ভিলেজ। তাই মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্য ভাষাও শেখার সুযোগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, ইদানীং দেখছি, একটি শ্রেণির যেন ফ্যাশনে ও প্রবণতায় পরিণত হয়েছে বাংলাকে ইংরেজির মতো উচ্চারণে কথা বলা। এই প্রবণতা অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপিকা মেরিনা হোসেন, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও কবি নির্মলেন্দু গুণ। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
শিরোনাম
- শান্তি প্রস্তাব মেনে নিতে ইউক্রেনকে সময় বেঁধে দিলেন ট্রাম্প
- মামদানিকে ট্রাম্পের অভিনন্দন, বৈঠককে বললেন ‘দারুণ ও ফলপ্রসূ’
- ফাইনালে পাকিস্তানকে পেল বাংলাদেশ
- ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩০
- বিএনপির রাজনীতিতে সব ধর্মের প্রতি সম্মান আছে : এ্যানী
- আমরা কোন রাজনীতির কথা ভাবছি
- রাজধানীতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আগুন, পুড়ল দোকান
- ঢাকায় ভূমিকম্পে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের সমবেদনা
- ভূমিকম্পে ঢাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের তালিকা প্রকাশ
- নারায়ণগঞ্জ জেলায় ভূমিকম্পে শিশুর মৃত্যু, আহত ২৪
- যাত্রাবাড়ীতে নবীউল্লাহ নবীর গণসংযোগ
- রাজধানীতে পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি
- ‘তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে হাসিনার বিচার হয়েছে, তবে আপিলের সুযোগ আছে’
- পোস্টাল ভোটিং: দুই দিনে সাড়ে ৬ হাজার নিবন্ধন
- একসঙ্গে সহকারী অধ্যাপক হলেন ১৮৭০ শিক্ষক
- হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন সতর্কবার্তা
- ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী জেলায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে
- রাজশাহীতে বদ্ধ ঘর থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
- ‘ঢাকার পুরনো ভবনগুলোর ৯০ শতাংশ বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মিত’
- ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০
ভাষার প্রতিও বিএনপি নেত্রীর সম্মান নেই
———————————— শেখ হাসিনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট ভার্সন
এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর