বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুই আসামির ফাঁসি কমে যাবজ্জীবন

রায়ে হতাশ রাকিবের বাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনার শিশু রাকিব হাওলাদার হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত দুই আসামি মো. শরীফ ও মিন্টু খানকে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে হাই কোর্ট। আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শেষে গতকাল বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়। একই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার করে টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই টাকা ভিকটিম রাকিবের পরিবারকে দিতে হবে। অনাদায়ে আসামিদের প্রত্যেককে দুই বছর করে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির, আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম মুবিনুল ইসলাম। রাকিবের পরিবারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সালমা সুলতানা। রায়ের পর আদালত বলেছে, আমরা দুই পক্ষের তথ্য-প্রমাণ বিচার করে যথার্থ রায় দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ভিকটিমকে বাঁচাতে আসামিরা শেষ পর্যায়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। এটা তথ্য প্রমাণে এসেছে। এ জন্য আমরা তাদের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দিয়েছি। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির সাংবাদিকদের বলেন, দুই আসামি রাকিবকে হত্যা করার পর আবার বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। এ বিষয়টি আমলে নিয়ে আদালত দণ্ড কমিয়েছে। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাকিবের পরিবারের পক্ষের আইনজীবী সালমা সুলতানা বলেন, আদালত একদিকে বলেছে, ভারতীয় উপমহাদেশের ১০০ বছরের ইতিহাসে এটি নিষ্ঠুর ও জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড, অন্যদিকে আসামিদের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দিয়েছে। এ রায় সাংঘর্ষিক। এর বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। এর আগে ১০ জানুয়ারি এ মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের ওপরে হাই কোর্টে শুনানি শুরু হয়। ২৯ মার্চ শুনানি শেষে রায়ের দিন ধার্য হয়। ১২ বছরের শিশু রাকিব হাওলাদারকে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বিকালে খুলনার টুটপাড়ায় শরীফ মোটরস নামে এক  মোটরসাইকেলের গ্যারেজে মোটরসাইকেলে হাওয়া দেওয়ার কমপ্রেসার মেশিনের মাধ্যমে মলদ্বারে হাওয়া ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরদিন রাকিবের বাবা মো. নুরুল আলম বাদী হয়ে গ্যারেজ মালিক মো. শরীফ, শরীফের সহযোগী মিন্টু খান ও মা বিউটি বেগমের বিরুদ্ধে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। আলোচিত এ মামলায় খুব অল্প সময়ে বিচারকাজ শেষে ওই বছরের ৮ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিলরুবা সুলতানা। রায়ে মো. শরীফ ও মিন্টু খানকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিউটি বেগমকে খালাস দেয় আদালত। মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাই কোর্টে এ মামলার নথি আসে। পাশাপাশি আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও জেল আপিল করেন।

রাকিবের পরিবারে ক্ষোভ : নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা জানান, রায় ঘোষণার পর খুলনায় রাকিবের মা লাকি বেগম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আপিলের রায়ে সাজা কমানো হয়েছে। আমার মাসুম বাচ্চাকে হত্যার বিচার তো পেলাম না। এরপর আসামিরা আপিলে বাইরে বেরোলে অপরাধ, সন্ত্রাস আরও বাড়বে।’ মায়ের আঁচল ধরে কাঁদছিল রাকিবের ছোট বোন রিমি খাতুন। বাড়ির সামনে তখন স্বজন আর প্রতিবেশীর ভিড়। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডে আসামিদের সাজা কমানোর রায় মেনে নিতে পারছেন না কেউ। রাকিবের বাবা নুরুল আলম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘হাই কোর্টের এই রায়ে আমরা কেউ খুশি নই। আমার ছেলে হত্যার বিচার পাইনি।’ তিনি সরকারের কাছে নিম্ন আদালতে দেওয়া দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখার দাবি জানান।

সর্বশেষ খবর