বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
নাজিমের লাশ নেয়নি মা

নব্য জেএমবির সাতজনকে নিয়ে অভিযানে পুলিশ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর কালীবাড়ি রোডের একটি বাসা থেকে আটক সাত নব্য জেএমবি সদস্যকে নিয়ে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। গতকাল দিনভর তাদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) নূরে আলম। তিনি জানান, পুলিশি হেফাজতে থাকা ওই সাত নব্য জেএমবি সদস্য প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে তাদের জঙ্গিসম্পৃক্ততা রয়েছে। বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনাও তাদের ছিল বলে স্বীকার করেছে তারা। বিশেষ করে পয়লা বৈশাখে তারা বড় ধরনের নাশকতা ঘটাতে চেয়েছিল। তবে এর আগেই তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয় পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, নব্য জেএমবির ওই সাত সদস্য তাদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে। তথ্যের ভিত্তিতে পৃথকভাবে পুলিশের টিম করা হয়েছে। ওই টিম আটকদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। তিনি জানান, তাদের ল্যাপটপ ঘেঁটে দেখা যায়, ঢাকা থেকে একজন এসে প্রতি সপ্তাহে তাদের প্রশিক্ষণ দিত। ওই প্রশিক্ষককে আটক করার জন্য অভিযান চলছে। তবে নিরাপত্তার কারণে ওই প্রশিক্ষকের নাম বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

সোমবার দুপুর ১টার দিকে কালীবাড়ি রোডের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন হালুয়াঘাট উপজেলার শহিদুল ইসলাম (৩৫) ও আশিকুর রহমান (১৯), ধোবাউড়া উপজেলার আল-আমিন (২৫), নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার মাসুম আহমেদ (৩০), ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাসির উদ্দিন (২৩)। এ ছাড়া ছদ্ম পরিচয়ধারী রোমান মিয়া (২৫) ও শাহ আল হাসান শামীমকে (২৫) আটক করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে বিপুলসংখ্যক জিহাদি বই, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। পাওয়া যায় ৭০ লাখ টাকার চেক। এদের মধ্যে একজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। চার মাস আগে তারা বাসাটি ভাড়া নেয়। ওই বাড়িটির চারপাশে রিজার্ভ পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।

মা শনাক্ত করলেন কিন্তু জঙ্গি ছেলের লাশ গ্রহণ করলেন না : মৌলভীবাজারে আস্তানায় নিহত জঙ্গি আশরাফুল আলম নাজিমের মা মনোয়ারা খাতুন গতকাল মৌলভীবাজারে থানায় গিয়ে লাশ শনাক্ত করলেও লাশ গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন, গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার দেওটি ইউনিয়নে ফিরে এলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোতায়ের হোসেন। নাজিম সোনাইমুড়ী উপজেলার দেওটি ইউনিয়নে কুমারঘরিয়া গ্রামের মৃত সুলতান মিয়ার ছেলে। নাজিমের মা মনোয়ারার বরাত দিয়ে সঙ্গে থাকা ইউপি মেম্বার মোতায়ের হোসেন জানান, সে বলেছে, তার ছেলে নাজিম জঙ্গির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় সে দেশের শত্রু। এ জন্য সে লাশ গ্রহণ করেন নাই। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে নাজিম সবার ছোট। এর আগে সরেজমিনে বাড়িতে গেলে নাজিমের বৃদ্ধা মাতা জানায়, নাজিম প্রথমে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার কড়িহাটি ছালেহ মিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করে। পরে ঢাকায় তার নানার কাছে যায় এবং একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হয় ও কোরআনে হাফেজ হয়। এ সময় তার মায়ের সঙ্গে মাঝে মাঝে মোবাইলে যোগাযোগ হতো। কিন্তু গত ৮-৯ মাস থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। তবে সত্যিই যদি ছেলে এই ধরনের কিছুর সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তার বিচার হোক বলে মন্তব্য করেন মনোয়ারা। চাটখিলের কড়িহাটি ছালেহ মিয়া ফাজিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ সাহবুবুর রহমান জানান, সে ২০১৪ সালে চাটখিলের কড়িহাটি ছালেহ মিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করে। আলিম পাস করার পর মাদ্রাসার কারও সঙ্গে আশ্রাফুলের যোগাযোগ নেই। সে ঢাকায় থাকে বলে শুনেছেন। সোনাইমুড়ী থানার ওসি ইসমাইল মিয়া, সিলেটের মৌলভীবাজরের নিহত জঙ্গির মধ্যে আশরাফুল আলম নাজিমের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সর্বশেষ খবর