মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

কোন্দলে বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ সুবিধাজনক অবস্থায় বিএনপি

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

কোন্দলে বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ সুবিধাজনক অবস্থায় বিএনপি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ সদর আসনে গত কয়েক মাস ধরেই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পোস্টার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডের ছড়াছড়ি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচারণায় অনেকটাই সরগরম জেলা সদরের রাজনীতি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি ছিল। তবে গত দুটি নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হন। তবে বিএনপি আসনটি পুনরুদ্ধারে ব্যাপক গণসংযোগ চালাচ্ছে। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য,  জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।  দলীয় সূত্রে জানা যায়, দলীয় বিদ্রোহে অনেকটা কাবু হয়ে পড়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। কতিপয় নেতার অতিরিক্ত ক্ষমতা ও প্রভাবে দলকে দুই শিবিরে ভাগ করেছে। দলীয় বিরোধ তুঙ্গে উঠে জেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং ইউপি নির্বাচন নিয়ে। তখন থেকেই জেলা আওয়ামী লীগ দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এমপি সমর্থক ও এমপিবিরোধী গ্রুপের নেতারা পরস্পরের মুখ দেখাদেখি বন্ধ রেখেছেন। প্রকাশ্যে সমাবেশ থেকে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে তির্যক মন্তব্য করছে। গত কয়েক বছর ধরে চলা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এখন রাজপথে গড়িয়েছে। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। দলীয় কেন্দ্রীয় কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি এমপি সমর্থক ও এমপিবিরোধীরা আলাদা আলাদাভাবে পালন করছেন। এসব কারণেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে দলের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এলাকায় নিয়মিত আসছেন, নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উন্নয়ন করার চেষ্টা করছেন। আগামীতে নৌকার জন্য ভোট চাইছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের এমপিবিরোধী গ্রুপের নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি বিভিন্ন স্থানে তার কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক যোগাযোগ করার পাশাপাশি প্রচারণা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে পোস্টারিং, ফেসবুক প্রচারণা চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি, সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মো. হেলাল উদ্দিন। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি, নাগরিক সমাজ সভাপতি তাজ মো. ইয়াছিন, সাবেক সচিব মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করছেন বলে তার কর্মী-সমর্থকরা জানিয়েছেন। এ আসনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মতপার্থক্য থাকলেও দলে  বিভেদ নেই। সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে দলটি। ২০১১ সালে উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে আসেন বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনীতি-বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা, শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। বর্তমানে তিনিই বিএনপির কাণ্ডারি। নিয়মিত এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানসহ ব্যাপক জনসংযোগ করছেন। সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তিনিই বিএনপির একমাত্র প্রার্থী বলে নেতা-কর্মীদের ধারণা। এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে মরিয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের যুব-বিষয়ক উপদেষ্টা ও সাবেক ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম ভূঞা। তিনিও এলাকায় জনসংযোগ চালাচ্ছেন। আবার বিলবোর্ড টানানোর পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন  কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সহসভাপতি, ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের স্থায়ী সদস্য জামাল রানা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনে জামায়াতে ইসলামী তেমন শক্তিশালী অবস্থানে নেই। তাছাড়া মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি আবুল হাসানাত আমিনীর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হেফাজতে ইসলাম নির্বাচনে অংশ নিলে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর