বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

নানা ছুতায় ফির বোঝা উদ্বিগ্ন অভিভাবক

শিক্ষার হালচাল - ১৮

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ভর্তি, টিউশন ও সেশন ফির বেড়াজালে আটকা পড়ে শিক্ষার্থীদের বাবা-মা ও অভিভাবকদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। এখন স্কুলে খাওয়ার পানির জন্যও ফি পরিশোধ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। শুধু তাই নয় বিদ্যুৎ বিলের জন্যও শিক্ষার্থীকে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এরকম রকমারি ফির ফাঁদে স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর জমা দেওয়া মাসিক বেতন স্লিপে প্রমাণ মেলে এরকম রকমারি ফির। ওই শিক্ষার্থীর বেতন স্লিপে দেখা যায়, পানি, বিদ্যুৎ, মাল্টিমিডিয়া চার্জ বাবদ জমা ১০০ টাকা, চতুর্থ-মাসিক পরীক্ষা ফি ২০০ টাকা, আইসিটি চার্জ ৫০ টাকা এবং টিউশন ফি এক হাজার ১৫০ টাকা, সব মিলিয়ে জমা নেওয়া হয়েছে মোট এক হাজার ৫০০ টাকা। একবার মাল্টিমিডিয়া চার্জ বাবদ অর্থ আদায় করা হলেও আইসিটি চার্জ বাবদ পুনরায় অর্থ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেনের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

শুধু এই স্কুল নয় রাজধানীর অধিকাংশ স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রতিমাসে গুনতে হয় বিভিন্ন ধরনের ফি। এসব ফি আদায়ের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো পরীক্ষা নেওয়া। সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক পরীক্ষার নামে বারো মাসই আদায় করা হয় অর্থ। এ ছাড়া স্পেশাল কেয়ার, ইনসেনটিভ কেয়ার নাম দিয়ে আদায় করা হয় অর্থ। স্কুলের পাঠ্যসূচি বহির্ভূত শিক্ষা কার্যক্রমের নামেও আদায় করা হয় অর্থ। আজিমপুরের একটি বেসরকারি স্কুলে দেখা যায়, দুটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। ছোট্ট বেঞ্চে চারজন করে শিক্ষার্থীকে বসানো হয়েছে। ব্যাগ পায়ের ওপর রেখে কোনোমতে বেঞ্চে বসেছে শিক্ষার্থীরা। পিঠের সঙ্গে লেগে যাচ্ছে পেছনের বেঞ্চটি। নড়াচড়ার অবস্থা নেই শিক্ষার্থীদের। বেঞ্চ বসানো হয়েছে বারান্দাতেও। পাশেই নোংরা টয়লেট। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে শ্রেণিকক্ষে। বছরের শুরুতেই এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ঢাউস আকারের এক ডায়েরি। এজন্য আদায় করা হয়েছে ৫০০ টাকা। এই ডায়েরির ওজন প্রায় তিনটি বইয়ের সমান। স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করিয়েছেন ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা সাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, এই স্কুলে শিক্ষার্থীরা নাকি ভালো ফলাফল করে তাই এখানে সন্তানকে ভর্তি করিয়েছে। কিন্তু প্রতি মাসেই নতুন নতুন বিষয় ধরিয়ে দিয়ে আদায় করা হয় অর্থ। ছেলেমেয়েদের খাতা পর্যন্ত স্কুল থেকে কিনতে হয়। বাইরে যে খাতার দাম ৫০ টাকা। এই স্কুল থেকে সেই খাতা কিনতে হয় ৫৫ টাকা করে। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, আগে শিক্ষা ছিল অধিকার এখন শিক্ষা হয়েছে পণ্য। টাকা না থাকলে শিক্ষা পাবে না এরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের চরমমাত্রায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সবার জন্য শিক্ষা এখন মুখরোচক বুলি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর