শিরোনাম
শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পুলিশের লাঠিপেটায় পণ্ড বাম জোটের ইসি ঘেরাও

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশি বাধায় ও লাঠিচার্জে পণ্ড হয়ে গেছে নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠনের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘেরাওয়ের কর্মসূচি। কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারা মোড়ে এ ঘটনায় জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জিলানী শুভসহ অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

হামলার প্রতিবাদে কাল শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে বাম জোট। ‘জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে’ নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি উপলক্ষে গতকাল বেলা ১২টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীরা। সমাবেশ শেষে নেতা-কর্মীরা ইসি অভিমুখে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে এলে সেখানে পুলিশ তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে তারা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যান। শাহবাগ, বাংলামোটর পার হয়ে সার্ক ফোয়ারা মোড়ে এলে সেখানে পুলিশ ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। এর পরও জোটের মিছিল এগোনোর চেষ্টা করলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। মিছিলে লাঠিচার্জের ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার সাত্যকি কবিরাজ সাংবাদিকদের বলেন, তাদের কাছে খবর ছিল, এ মিছিল থেকে কোনো নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য তাদের এগোতে দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবেই তাদের থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মিছিল থেকেই পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তিনি জানান, এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। পুলিশের এমন বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে জোটের শরিক সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, সার্ক ফোয়ারার কাছে গণতান্ত্রিক জোটের পদযাত্রা পৌঁছালে পুলিশ বিনা উসকানিতে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এতে অর্ধশতাধিক আহত হন। সার্ক ফোয়ারা মোড়ের ওপর সেখানে বিক্ষোভ করেন দলটির নেতারা। বিক্ষোভ সমাবেশে বলা হয়, আগামী ১১ অক্টোবর সচিবালয় ঘেরাও করা হবে। যে কোনো মূল্যে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। প্রেস ক্লাবের সামনে জোটের বিক্ষোভ সমাবেশে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু ও গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজ আহমেদ বক্তব্য দেন। সমাবেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, ইভিএম চালু ও ডিজিটাল ভোট ডাকাতির পাঁয়তারা বন্ধ করা, প্রার্থীর জামানত ৫ হাজার টাকা ও নির্বাচনী ব্যয় ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করে কঠোরভাবে তা মেনে চলতে বাধ্য করা, অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান চালু করা, ভোটারের ইচ্ছায় জনপ্রতিনিধি প্রত্যাহার করা এবং ‘না’ ভোটের বিধান চালু করা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক সইয়ের বিধান বাতিল করার দাবি জানানো হয়। পরে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম এক বিবৃতিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে হামলাকারী পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান।

বিএনপির নিন্দা : বাম গণতান্ত্রিক জোটের মিছিলে পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাম গণতান্ত্রিক জোটের মিছিলের ওপর পুলিশের হামলায় এটাই প্রমাণিত হয়, সরকার আবারও ৫ জানুয়ারির মতো আগামী জাতীয় নির্বাচন একতরফাভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার মাস্টারপ্ল্যান করছে। কিন্তু জনগণ সরকারের কোনো ‘অশুভ’ পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন হতে দেবে না। এ ছাড়া বাম জোটের মিছিলে পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্য আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

সর্বশেষ খবর