রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

আগুন প্রতিরোধের সেই ১৭ দফা সুপারিশ এখনো কার্যকর হয়নি

আরাফাত মুন্না

৯ বছর আগে রাজধানীর নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর হাই কোর্টের নির্দেশে গঠিত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির দেওয়া ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি আজও। সম্প্রতি বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর ওইসব সুপারিশের বিষয়গুলো আবার আলোচনায় এসেছে। আইনজ্ঞরা বলছেন, সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন করলে অগ্নিকা- অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো। কমত অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতাও।

১৭ দফা সুপারিশে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ ও ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণ নিশ্চিত করার এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের অবকাঠামো, জনবল, প্রশিক্ষণ ও সাজ-সরঞ্জাম আধুনিকায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। অগ্নিকন্ডের সময় যেন উৎসুক জনতা উদ্ধারকাজে বিঘ্ন ঘটাতে না পারে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশনাও ছিল সুপারিশে, এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৬ জন নিহত হয়েছেন। আর কদিন আগে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় নিহত হয়েছিলেন ৬৮ জন। চুড়িহাট্টার এ ঘটনার পর ক্ষোভ প্রকাশ করে হাই কোর্ট বলেছে, নিমতলীর ঘটনায় গঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে ৮০ শতাংশ দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যেত। ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর ৪৩/১ নবাবকাটারায় পাঁচতলা বাড়িতে স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ১২৩ জন নিহত হন। আহত হন কয়েকশ মানুষ। ঘটনার পর বেলাসহ কয়েকটি সংগঠন অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে হাই কোর্টে রিট করে। এরপর হাই কোর্টের  নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ১৭ দফা নির্দেশনা দেয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বেশকিছু অগ্নিকান্ডে র ঘটনা ঘটেছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। নিমতলীর ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কমিটি আগুন প্রতিরোধে কিছু সুপারিশ দিয়েছিল, সেগুলোও বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি বলেন, এসব কারণে প্রশাসনের অবস্থানটা বোঝা যায়। মানুষ মরছে, তাদের যেন গায়েই লাগছে না। প্রশাসনের বিভিন্ন চেয়ারে যারা বসে আছেন, তারা যেমন মাস শেষে বেতন নিচ্ছেন, আবার অবৈধভাবেও আয় করছেন। দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে হলে তাদের অবৈধ আয় বন্ধ করতে হবে। বনানীর অগ্নিদুর্ঘটনার বিষয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে ভবনগুলো পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে। কোনো অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এমনকি পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা না থাকায় উদ্ধার কার্যক্রমও সেখানে এক পর্যায়ে বন্ধ ছিল। এসব ঘটনা কর্তৃপক্ষের দুর্বলতাই তুলে ধরে। বিষয়গুলো হাই কোর্টে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে আইনজীবী ইমতিয়াজ আহমেদ কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাই কোর্টের নির্দেশে গঠিত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ১৭ দফা সুপারিশ দিল, তা বাস্তবায়ন হলো না। এটা প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রমাণ। ওই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে অগ্নিকা- প্রতিরোধের পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হতো বলেও মনে করেন তিনি। যা আছে ১৭ দফা নির্দেশনায় : জরুরি ভিত্তিতে আবাসিক এলাকা থেকে গুদাম বা কারখানা সরিয়ে নেওয়া; অনুমোদনহীন কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া; অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ ও ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণ নিশ্চিত করা; রাসায়নিক দ্রব্যের মজুদ, বাজারজাতকরণ এবং বিক্রির লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে তদারকি প্রক্রিয়া বাড়ানো; আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক বা বিস্ফোরক দ্রব্যের মজুদ বা বিপণনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা; দ্রুত অগ্নিনির্বাপণের জন্য স্থানীয়ভাবে পৃথক পানির লাইনসহ হাইড্রেন্ট পয়েন্ট স্থাপন; আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক বা বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ মজুদ বা বিপণন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা; বাড়িঘরে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক তারের গুণগত মান নিশ্চিত করা; রাস্তায় স্থাপিত খোলা তারের ব্যাপারে সাবধানতা; সম্ভাব্য দুর্ঘটনা পরিহার করতে মাসে অন্তত একবার ট্রান্সফরমার সরেজমিন পরীক্ষা করা; দুর্ঘটনা মোকাবিলায় জাতীয় পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন; রাসায়নিক ও রাসায়নিক জাতীয় দাহ্য বস্তুর সব দফতরের মধ্যে সমন্বয়; চাহিদা অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের অবকাঠামো, জনবল, প্রশিক্ষণ ও সাজ-সরঞ্জামের আধুনিকায়ন, সচেতনতা বাড়ানো; অগ্নিকান্ডের সময় যেন উৎসুক জনতা উদ্ধারকাজে বিঘ্ন ঘটাতে না পারে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো; পাঠ্যসূচিতে অগ্নিকা , উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয় বাধ্যতামূলক করা; ৬২ হাজার কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ডেকোরেটরের উপকরণের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখা।

সর্বশেষ খবর