বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুই টাকা দিন ক্লাসরুম কিনব!

শরিফুল ইসলাম সীমান্ত, জাবি

প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো নিজস্ব ক্লাসরুম পায়নি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আইন অনুষদ। একাধিকবার ক্লাসরুমের দাবিতে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েও কোনো ফল না পেয়ে অবশেষে অভিনব পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানিয়েছে অনুষদটির শিক্ষার্থীরা। গতকাল সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ব্যালকনিতে অনুষদটির কতিপয় শিক্ষার্থীকে ‘দুই টাকা দিন, ক্লাসরুম কিনব!’ লেখা কাগজ নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে দেখা গেছে।

আর এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সবাই আইন অনুষদের এ ক্লাসরুম সংকট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। জাবির বর্তমান ১০টি অনুষদের অন্যতম একটি হচ্ছে আইন অনুষদ। যার একমাত্র বিভাগের নাম ‘আইন ও বিচার বিভাগ’। এখনো পর্যন্ত পূর্ণতা পায়নি এ অনুষদটি। পায়নি স্থায়ী কোনো ঠিকানা। বিভাগটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা  বলেন, ‘স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় অনেকটা ভাসমান কোনো বিভাগের শিক্ষার্থীদের মতোই মনে হয়। যাদের পায়ের তলায় কোনো মাটি নেই। অনেক সময় অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাঁকা কথাও শুনতে হয়। তাই শেষ পর্র্যন্ত ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নিতে হয়েছে।’

২০১১ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১তম আবর্তনকে দিয়ে যাত্রা শুরু হয় আইন অনুষদের। এখনো পর্যন্ত নিজস্ব ভবন তো দূরের কথা স্থায়ী কোনো অফিস কিংবা শ্রেণিকক্ষও নেই এ অনুষদটির। এরই মধ্যে এসেছে ৮টি ব্যাচ। যার মধ্যে বিভাগটির প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচ শেষ করে ফেলেছে তাদের পড়াশোনার পাঠ। বর্তমানে ৪৩তম ব্যাচ থেকে ৪৮তম ব্যাচের প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আইন অনুষদে অধ্যয়নরত আছে। এ শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো সেমিনার রুম, লাইব্রেরি, ছাত্র-ছাত্রীদের বসবার মতো কোনো স্থান, বা দাঁড়াবার মতো কোনো করিডোর। সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন মাত্র ৮ জন শিক্ষক। এখনো পর্যন্ত শিক্ষকরাও পাননি স্থায়ী কোনো অফিস কক্ষ। ২০১১ সালে যাত্রা শুরুরকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তৃতীয় তলার ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের একটি কক্ষকে শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করে এলেও কিছু দিন আগে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ কক্ষটিকে নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে। অবশ্য এখন চতুর্থ তলায় নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের একটি শ্রেণিকক্ষকে আইন অনুষদ ব্যবহার করছে। এ কক্ষটিতেও রয়েছে পর্যাপ্ত চেয়ার-টেবিল এবং পাখার অভাব। এ ছাড়া নিজস্ব ভবন বা শ্রেণিকক্ষ না থাকায় এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জহির রায়হান মিলনায়তনের দুটি ল্যাব রুমকে শ্রেণিকক্ষ হিসেবে তাদের ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক কে এম সাজ্জাদ মহাসীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়ে সংকট কাটিয়ে ওঠার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা হয়নি।’ বর্তমানে এ অনুষদটির ডিনের দায়িত্ব পালন করছেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক বশির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য সাড়ে ১৪শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে আইন অনুষদের জন্য ভবন নির্মাণ করা হবে। সেটির জন্য দুই আড়াই বছর সময় লাগবে।’

সর্বশেষ খবর