সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

কমছে পানি বাড়ছে ভাঙন

নিজস্ব প্রতিবেদক

কমছে পানি বাড়ছে ভাঙন

বগুড়ার শাজাহানপুরে স্কুল মাঠে বন্যার পানি

দেশের অধিকাংশ নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে সামগ্রিকভাবে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও পাঁচ-ছয় দিন লাগতে পারে বলে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে। নদী বিশেষজ্ঞ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যার পানি নামতে শুরু করায় আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে ভাঙন বেশি হতে পারে। বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চল থেকে বন্যার পানি দ্রুত নামছে। আগামী চার পাঁচ দিনের মধ্যে দেশের বেশির ভাগ এলাকা থেকে পানি নেমে যাবে। পানি নেমে যাওয়ার সময় উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের চার-পাঁচটি জেলায় নদীভাঙন বাড়তে পারে। এদিকে পানি কমে যাওয়ার কারণে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। বন্যায় এ পর্যন্ত ১১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথ ইমারজেন্সি অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের এ তথ্য। নিহতদের বেশির ভাগই হচ্ছে শিশু-কিশোর। যাদের বড় অংশ পানিতে ডুবে মারা গেছে। এ ছাড়া বন্যায় এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৬৭৬ জন নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অন্যদিকে গতকাল দুর্যোগব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, বন্যায় এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৭৫ জন। ২৮ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬১ লাখ মানুষ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- সিরাজগঞ্জ : যমুনার পানি ফের কমে এখন বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও অনেক বসতভিটা এখনো পানির নিচে রয়েছে। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে উঠতে শুরু করেছে। দুর্গন্ধময় পানি ও স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে চলাফেরা করায় পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে শুকনো খাবারসহ শিশুখাদ্য, ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বানভাসী অর্ধেক মানুষের কাছে সরকারি সহায়তা পৌঁছেনি। রাতের বৃষ্টি দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় চলাচলে চরম দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া খাদ্যের অভাবে গরুগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন দুধ কম হচ্ছে অন্যদিকে কোরবানির আগে দাম নিয়ে কৃষকরা শঙ্কায় পড়েছেন। অন্যদিকে রাস্তা ডুবে থাকায় চলাচলেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সবকটি নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ১২ সেন্টিমিটার কমে এখনো বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে ঘাঘট, করতোয়া ও তিস্তা বিপদসীমার নিচে রয়েছে। পানি কমতে শুরু করলেও এখনো রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি জলমগ্ন রয়েছে। তাই বন্যার্তরা এখনো তাদের বাড়িঘরে ফিরতে পারেননি। উঁচু রাস্তা, বাঁধ, স্কুল ও বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে তাদের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। এদিকে বন্যাকবলিত এলাকা ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. এ বি এম আবু হানিফ জানান, সাত উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নের বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য ১০৯টি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদান করছেন। বগুড়া : পানি কমছে আর দুর্ভোগের চিত্র ফুঠে উঠছে। বানভাসিদের নানা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। রোগবালাই বাড়ছে। বগুড়ার দুটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নয়ন হয়নি। এরই মধ্যে আরও একটি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার শাজাহানপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের নতুন করে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৩৯৬ হেক্টর জমির ফসল। আর পানিবন্দী হয়ে আছে ২৩ গ্রামের মানুষ। কুড়িগ্রাম : ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি কমা অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ব্রহ্মপুত্রের পানি এখন বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পানিতে ডুবে আমিনা (৯) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুরে সে নিখোঁজ হয়। পরে বিকাল ৪টায় তার মরদেহ স্বজনরা উদ্ধার করে। আমিনা রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর চরের গ্রামের সাইকেল মেকার আমিনুলের মেয়ে। পানি নেমে যাওয়ায় বন্যার্তদের অনেকেই ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে নিচু এলাকা জলমগ্ন থাকায় এখনো রাস্তা ও বাঁধের ওপর আশ্রয়ে আছেন হাজার হাজার মানুষ। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি আর শুকনো খাবারসহ গো-খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে দিনমজুরদের কাজের সংকট। সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী : গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, বন্যায় সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার  ৩৭৮ ঘরবাড়ি, ৭ হাজার ২৭ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক, ২৯৭টি ব্রিজ-কালভার্ট, ৪৫৯ কিলোমিটার বাঁধ, ৬০ হাজার ২৮৯টি টিউবওয়েল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেড় লাখের বেশি ফসলি জমি। এ সময় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল উপস্থিত ছিলেন। 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর