সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রিজার্ভ উদ্ধারে এপিজির হস্তক্ষেপ চায় সরকার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে এবার এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং-এপিজির হস্তক্ষেপ চাইল সরকার। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত এক সভায় এ সহায়তা চাওয়া হয়। ফিলিপাইনের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও তার কজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ফেব্রুয়ারিতে মামলা করার পর এবার অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে এপিজির সহায়তা চাওয়া হলো। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪১টি দেশের সংগঠন এপিজি মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণকারী সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের একটি আঞ্চলিক সংস্থা। এপিজি সদস্য দেশগুলো মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত আইন, নীতি ও বিধি পালন করছে কিনা মূল্যায়ন করে। আইন পরিপালনে ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলোকে শাস্তি হিসেবে ব্ল্যাক লিস্ট করার ক্ষমতাও রয়েছে এপিজির। বাংলাদেশ এবং ফিলিপাইন এপিজির সদস্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামলার পাশাপাশি এপিজির সহায়তায় যদি ফিলিপাইনের অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায়, তবে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। 

গত ৭ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির সভা হয়। সভায় বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে গৃহীত অ্যাকশন প্ল্যানের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। 

সেসময় সভার সভাপতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এপিজির মিউচুয়াল ইভ্যালুয়েশন বিষয়ক পরিচালক ডেভিড শ্যাননকে উদ্দেশ করে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরিকৃত অর্থ ফিলিপাইন থেকে উদ্ধার কার্যক্রমে বাংলাদেশ দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী এপিজিকে ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অর্থ চুরির সঙ্গে জড়িত দেশটির বিভিন্ন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আহ্বান জানান।

জবাবে ডেভিড শ্যানন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি শুধু বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং এটা বৈশ্বিক আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থায় ঝুঁকি তৈরি করেছে এবং এপিজি এ বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এপিজির প্রাইমারি কন্ট্যাক্ট পয়েন্ট হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএফআইইউর সাবেক উপপ্রধান মাহফুজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মতো ফিলিপাইনও এপিজির সদস্য। সে কারণে রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে এপিজি যদি ফিলিপাইনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর যথাযথ চাপ সৃষ্টি করে তবে বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যাবে। যৌক্তিক কারণে সদস্য রাষ্ট্রকে কালো তালিকাভুক্ত করতে পারে এপিজি। ফিলিপাইনকে যদি কালো তালিকাভুক্ত করা হয়, তবে দেশটির কোনো ব্যাংকের সঙ্গে অন্য দেশের ব্যাংকগুলো আমদানি-রপ্তানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলবে না। ফলে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যয় বেড়ে যাবে। এটি এক ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। সে কারণে ফিলিপাইনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর যদি এপিজি চাপ সৃষ্টি করে, তারা তখন শাস্তির ভয়ে যারা রিজার্ভ চুরিতে সহায়তা করেছে, তাদের অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য করবে।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার ফেরত আসে। আর ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে এখনো উদ্ধার করা যায়নি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। ঘটনার তিন বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা রিজার্ভ  থেকে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার ফেরত পেতে নিউইয়র্কের ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলাটি করা হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ মামলায় মূলত ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংক এবং এর পদস্থ কর্মকর্তাসহ কয়েক ডজন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর