বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

গণপূর্তে দুর্নীতির ১০ উৎস

প্রতিরোধে দুদকের ২০ সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবকাঠামো বিষয়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ গণপূর্ত অধিদফতরে দুর্নীতির ১০টি উৎস চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এসব দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক টিমের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের আলোকে সরকারের কাছে ২০ দফা সুপারিশ করেছে দুদক। গতকাল সচিবালয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে দেন দুদক কমিশনার মো.  মোজাম্মেল হক খান। দুদক বলছে, দরপত্র প্রক্রিয়াতেই দুর্নীতি  বেশি হয়। এক্ষেত্রে যথাযথভাবে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ না করা, অপছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেওয়া, অস্বাভাবিক মূল্যে প্রাক্কলন তৈরি, ছোট ছোট প্যাকেজে প্রকল্প প্রণয়ন, দরপত্রের শর্ত উপেক্ষা করা ও টেন্ডারের শর্তানুসারে কাজ বাস্তবায়ন না করা উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া কাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার; প্রকল্প প্রণয়ন, তদারকি, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কাজে ধীরগতি; প্রয়োজনের তুলনায় কম বরাদ্দ; প্রকল্পের অনাবশ্যক ব্যয় বৃদ্ধি; স্থাপত্য ও কাঠামোগত নকশা চূড়ান্তে বিলম্ব হয়। একই সঙ্গে প্রত্যাশী সংস্থার প্রয়োজন মতো জরুরি ভিত্তিতে কাজ শেষ না করা; সেবা প্রদানের বিভিন্ন স্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতা; সময় মতো ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ না করা এবং বরাদ্দ থাকার পরও ঠিকাদারদের আংশিক বিল পরিশোধ করার চিত্রও উঠে দুদকের প্রতিবেদনে। দুদকের সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, দুর্নীতি প্রতিরোধে গণপূর্ত অধিদফতরে ই-জিপি দরপত্র প্রক্রিয়া সার্বিকভাবে বাস্তবায়ন প্রয়োজন। প্রকল্প নির্বাচনের সময় ওই প্রকল্পের যথার্থতা বা উপযোগিতা আছে কিনা তা গণপূর্ত অধিদফতর ও চাহিদা প্রদানকারী সংস্থাকে নিশ্চিত করতে হবে। প্রাক্কলন প্রস্তুত এবং দরপত্রের আর্থিক ও কারিগরি প্রস্তাব মূল্যায়নের সময় স্থানীয় দরপত্রের ক্ষেত্রে প্রত্যাশী সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও আন্তর্জাতিক দরপত্রের ক্ষেত্রে দাতা সংস্থার প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন পরবর্তী একটি যৌক্তিক সময় পর্যন্ত ওই কাজের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিজ খরচে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর অর্পণ করা যেতে পারে। গণপূর্ত অধিদফতরের ট্রেনিং একাডেমি ও টেস্টিং ল্যাবরেটরিকে আধুনিক করে গড়ে তোলা দরকার। নগর উন্নয়ন সংক্রান্ত অনুমোদিত মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন। গণপূর্ত অধিদফতরের যেসব কর্মকর্তা নামে-বেনামে ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে জড়িত, তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। পরামর্শক সংস্থার প্রাক যোগ্যতা নির্ধারণ ও পূর্ব যোগ্যতা মূল্যায়ন করে ঠিকাদারদের নিবন্ধন ও সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রণয়ন এবং তা ওয়েবসাইটসহ সর্বমহলে প্রচারের ব্যবস্থা করা উচিত। নির্মাণ কাজে গাফিলতি কিংবা এজেন্ট বা ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটালে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা এবং যৌক্তিক কারণ ছাড়া প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি না করার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর বা প্রতিষ্ঠানের আইন ও বিধিবিধানের পদ্ধতিগত ত্রুটি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব এবং জনবল সংকট থেকে সৃষ্ট দুর্নীতির ক্ষেত্র ও উৎস চিহ্নিত করতে ২০১৭ সালে দুদক ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করে। দুর্নীতির উৎস বন্ধ বা প্রতিরোধে বাস্তবতার নিরিখে সুপারিশ প্রদান এই টিমের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এর মধ্যে গণপূর্তের অনুরূপ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ এবং সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিশনের একজন পরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করা হয়। এই টিম অনুসন্ধানে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিমান, রাজউক, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, রেলসহ ১৪টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা নিয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গণপূর্ত নিয়ে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলো।

সর্বশেষ খবর