রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

খালেদার মুক্তির বড় কর্মসূচি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় বিএনপি

বিদেশ সফরে যাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা

শফিউল আলম দোলন

খালেদার মুক্তির বড় কর্মসূচি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় বিএনপি

দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তি দাবিতে আপাতত বড় কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি। তৃণমূলের তীব্র দাবি সত্ত্বেও কেন্দ্রের অনীহায় ছোটখাটো বিক্ষোভ বা মানববন্ধন কর্মসূচির বাইরে বেরোতে পারছে না দলটি। দেশের ভিতরে কিছু করতে না পারলেও এবার তাঁর মুক্তির তদবির নিয়ে বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। বিশ্বের প্রভাবশালী বেশ কিছু দেশ সফর, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা। সফরকালে তারা সেসব দেশের সরকারের কাছে মানবিক কারণে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের ওপর চাপ দিতে অনুরোধ জানাবেন। একই সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসংক্রান্ত এবং আদালতের বিচারিক কাগজপত্রের কপিসহ দলের পক্ষ থেকে মহাসচিবের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি হস্তান্তর করা করা হবে সংশ্লিষ্টদের। জানা যায়, ইউরোপ-আমেরিকা, রাশিয়াসহ চীন, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে সাতটি টিমে ভাগ হয়ে যাচ্ছেন নেতারা। বিএনপি নেতা-কর্মীরা এটা ধরেই নিয়েছেন, সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। সরকারের এমন আচরণে দলের তৃণমূল বিক্ষুব্ধ। তারা বড় ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি চান। কিন্তু এর ঘোর বিরোধী দলের নীতিনির্ধারক মহল। তাদের বিশ্বাস, এ মুহূর্তে বড় ধরনের কোনো আন্দোলনে যাওয়ার মতো শক্তি বিএনপির নেই। তা ছাড়া দলের ভিতরে কিছুটা অস্থিরতাও চলছে। তাই সিনিয়র নেতারা আরও সময় নিতে চান। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বড় হোক ছোট হোক, কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। দেশনেত্রীর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’ লন্ডন বিএনপির এক সূত্র জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এ মুহূর্তে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। তিনি নিজেও দলের শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে এ মুহূর্তে অনেকটাই সংশয়ে রয়েছেন। সেজন্য বড় কোনো কর্মসূচি পালনের পক্ষে নন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, বড় কোনো কর্মসূচিতে না গেলেও ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান নিয়ে মাঠে থাকবেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে আপাতত গতানুগতিক কর্মসূচি দেবে বিএনপি। আজ ঢাকাসহ সব জেলা ও মহানগরে সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি পালন করা হবে। এরপর আবারও কর্মসূচি দেওয়া হবে। গত বৃহস্পতিবার গুলশানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আইনজীবীদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। জানা গেছে, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ইতিমধ্যে দেশের বাইরে গেছেন। লন্ডন হয়ে আমেরিকাসহ আরও দুটি দেশ সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে তার। এর বেশ কয়েকদিন আগে সফরে গেছেন চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা ও সাবেক একজন এমপি। এ ছাড়া বিএনপি মহাসচিব থেকে শুরু করে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, তার ছেলে তাবিথ আউয়াল, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদসহ বড় ও মাঝারি পর্যায়ের আরও কমপক্ষে ১৫ জন নেতা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দেশে যাবেন। তারা বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ছাড়াও জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ইউরোপীয় কমিশন (ইসি), ওআইসি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় চিঠি দেবেন বিএনপির পক্ষ থেকে। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানান, দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তিসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা সরকারবিরোধী একটি সমন্বিত আন্দোলনের চিন্তাভাবনা করলেও এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো প্রস্তুতি তাদের নেই। কারণ আন্দোলনের ধরন ও কৌশল নিয়ে নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের ভিতরেই মতভেদ আছে। আবার এ পরিস্থি?তিতে শক্ত কর্মসূচি দিলেও নেতা-কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ কতটা হবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে আপাতত বড় কর্মসূচিতে না গিয়ে গতানুগতিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। বি?এনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মনে করেন, শুধু বিএনপি নেতা-কর্মীই নন, তার সঙ্গে দেশের সাধারণ মানুষও চরম ক্ষুদ্ধ এই সরকারের প্রতি। কাজেই সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে একই সঙ্গে আন্দোলন শুরু হবে এ সরকারের বিরুদ্ধে।

সর্বশেষ খবর