রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বরিশালে একই বাড়ি থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর এলাকার এক কুয়েত প্রবাসীর বাড়ি থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে বানারীপাড়া থানা পুলিশ ওই তিনজনের লাশের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে প্রেরণ করে। তাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করলেও কেন এবং কারা এই নৃশংসতা ঘটিয়েছে তা জানাতে পারেননি পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম। নিহতরা হলেন- কুয়েত প্রবাসীর মা মরিয়ম বেগম (৭৫), ভগ্নিপতি অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক শফিকুল আলম (৬০) এবং খালোতো ভাই ভ্যানচালক মো. ইউসুফ (৩২)। এর মধ্যে শফিকুল তিন দিন আগে ওই বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন এবং ইউসুফ মাঝেমধ্যে ওই বাড়িতে রাত যাপন করতেন। ১১ বছর ধরে হাফেজ আবদুর রব কুয়েতে একটি মসজিদে ইমামতি করেন। রবের স্ত্রী মিসরাত জাহান মিশু দুই সন্তান ইফাদ জাহান ও নূরজাহান এবং শাশুড়িকে নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। তার বড় ছেলে ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় হাফেজি পড়ে। শুক্রবার দিবাগত রাতে ওই বাসায় ছিলেন মিসরাত ও তার দুই শিশুসন্তান, শাশুড়ি, ভাতিজি চাখার কলেজের এইচএসসির প্রথম বর্ষের ছাত্রী আছিয়া আক্তার, রবের ভগ্নিপতি শফিকুল আলম এবং খালাতো ভাই মো. ইউসুফ। ওই রাতে নাতনি আছিয়ার সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলেন বৃদ্ধা মরিয়ম। গতকাল ভোর ৫টার দিকে আছিয়া ফজরের নামাজ পড়তে ঘুম থেকে উঠে দাদিকে বিছানায় না পেয়ে খুঁজতে গিয়ে বেলকনিতে তার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তার ডাক-চিৎকারে আশপাশের মানুষ এসে বাসার মধ্যে আরেকটি কক্ষে শফিকুল আলমের এবং বাড়ির সামনে পুকুরে ভাসমান অবস্থায় ইউসুফের পা বাঁধা লাশ দেখে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ তিনটি উদ্ধার করে। পরে সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করে গৃহকর্ত্রী মিসরাত জাহান মিশু বলেন, গ্রামের কারও সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ নেই। দুর্বৃত্তরা তার কক্ষের আলমারি থেকে স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে গেছে দাবি করলেও তিনি কিছুই টের পাননি বলে জানান। এ ঘটনার পর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত মিশু। প্রবাসী রবের ভায়রা হারুন সিকদার বলেন, নিহত শফিকুলের সঙ্গে তার ছোট ভাই শহীদুল ইসলামের জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এ নিয়ে তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে একাধিকবার সংঘাতও হয়। তিন দিন আগে ওই বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে শফিকুল তাকে বিষয়টি জানান। ওই ঘটনার জের ধরে এ হত্যাকা- সংঘটিত হতে পারে সন্দেহ করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মাহমুদ জানান, আবদুর রবের পাকা ঘরের সব দরজা-জানালা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। কোনো গ্রিলও কাটা কিংবা ভাঙা নেই। ডাকাতির কোনো আলামতও তেমন দেখা যায়নি। বিষয়টি রহস্যে ঘেরা বলে মনে করেন এলাকাবাসী। এদিকে একই বাড়িতে তিন লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রাকিব এবং পিবিআই ও সিআইডি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেন।

পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ওই বাসার ভিতর থেকে সব দরজা-জানালা আটকানো ছিল। গৃহকর্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী তার আলমারি থেকে একটি বা দুটি স্বর্ণের চেইন খোয়া গেছে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। নিহত তিনজনের নাক ও কান থেকে রক্ত ঝরছিল। ধারণা করা হচ্ছে, কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করে তাদের তিনজনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। এ ঘটনায় মামলা দায়েরসহ অভিযুক্তদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ সুপার জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর