শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

আচরণবিধি নিয়ে উৎকণ্ঠায় ইসি

অবৈধ অস্ত্রধারীদের গ্রেফতারের নির্দেশ, ভোট দেওয়ার প্রয়োজনে চলবে প্রাইভেট কার, দুদকের মামলায় ইশরাকের নির্বাচনী কাজে বাধা নেই, ভোটের তারিখ পেছাতে আবেদন আপিল বিভাগে

গোলাম রাব্বানী

আচরণবিধি নিয়ে উৎকণ্ঠায় ইসি

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ  সিটির ভোটের দুই সপ্তাহ বাকি। চলছে জমজমাট প্রচার-প্রচারণা। পাল্টাপাল্টি অভিযোগও করছেন প্রার্থীরা। প্রচারে মেয়র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠেছে। একজন নির্বাচন কমিশনার আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশও করেছেন। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীদের প্রচারের সময় অতি উৎসাহীদের ভিড়ে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে। কাউন্সিলররাও যোগ দিয়ে পুরো রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য এখনো কারও বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয়নি। উত্তরে মঙ্গলবার একজনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পোস্টার, ব্যানার, প্রচারণা, মাইকিংসহ যথাযথভাবে আচরণবিধি প্রতিপালিত হচ্ছে না অনেক এলাকায়- এমন তথ্য গণমাধ্যমেও আসছে। এ নিয়ে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়ায় ‘ঘাটতি’ রিটার্নিং অফিসারদের নজরেও এসেছে। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই কড়াকড়ি আরোপে নির্বাহী হাকিমদের তৎপর হতে বলা হয়েছে। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, আচরণবিধি লঙ্ঘন চলছে। আচরণবিধি দেখার কেউ নেই। ইসির কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। তাদের প্রশ্ন- আচরণবিধি কজনে মানছেন? প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় কে? সাদা কালো রঙের পোস্টার না দিয়ে বহু রঙের পোস্টার কেন? দেয়ালে কেন পোস্টার? কাউন্সিলরের পোস্টারে দলীয় প্রধানের ছবি কেন? রাস্তাঘাট বন্ধ করে সভা-মিছিল করছে কেন? এমন অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নির্বাচনী মাঠে। যদিও ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, যারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন, তাদের জরিমানা করা হয়েছে। তারপর সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বিধি ভঙ্গ করলে আরও কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র যাদের কাছে, তাদের ধরতে জোরদার পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। খারাপ কোনো পরিস্থিতির রিপোর্ট নেই। খুবই আনন্দ উৎসবমুখর পরিবেশে সব প্রার্থী প্রচার চালাচ্ছেন। গতকাল নির্বাচন ভবনে তিনি এসব কথা বলেছেন। অসন্তোষ দক্ষিণে : দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন নির্বাহী হাকিম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত বুধবার বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আচরণবিধি প্রতিপালনে কঠোর হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি। এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সন্তোষ প্রকাশ করলেও প্রচারণায় বিধিলঙ্ঘনের অপচেষ্টা ও ঘাটতিতে অসন্তোষ রয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তার। তিনি বলেন, নির্বাহী হাকিম, পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের বলেছি- আমাদের যা সহায়তা দরকার করব। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে জানাব। সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে; ভোটের পরিবেশ ভালো রাখব। উত্তরেও তৎপরতা বাড়বে : উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম বলেন, এখন পর্যন্ত প্রার্থীদের প্রচারণা সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে। কোনো অভিযোগ পেলে খোঁজ নিচ্ছি। তবে প্রচারণা শুরুর পর গত মঙ্গলবার একজনের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয়েছে। আমরা কঠোরভাবে বলে দিয়েছি- আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেই ব্যবস্থা। নির্বাহী হাকিমদের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এমপিরা প্রচারে আসবেন না- আশা সচিবের : প্রার্থীদের প্রচারে কোনো ধরনের বাধা যেন না হয় সে বিষয়ে নজর রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর। প্রচারের শুরুতে হাতাহাতি-হামলার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সচিব বলেছেন, নির্বাচন কমিশন কড়াকড়ি নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে। প্রাইভেট কার চলবে : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের দিন কেবল ভোট দেওয়ার প্রয়োজনে প্রাইভেট কার চলবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. আলমগীর। তিনি বলেছেন, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের দিন কেবল ভোট দেওয়ার জন্য প্রাইভেট কার ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য পুলিশকে দেখাতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় অভিযুক্ত বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী কাজে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন ইসির সিনিয়র সচিব।  সরস্বতী পূজার কারণে ভোটের তারিখ পরিবর্তন বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যে রায় আসবে কমিশন তা অবশ্যই মেনে নেবে বলে জানিয়েছেন ইসির সচিব। সিটি নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২২ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের তারিখ পরিবর্তন চেয়ে ঢাবিতে অনশন : সরস্বতী পূজার কারণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে টানা আন্দোলনের পর এবার অনশন শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী। গতকাল দুপুর ২টার দিকে রাজু ভাস্কর্যে আমরণ অনশন শুরু করেন তারা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা। জানা গেছে, দুপুরে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অনশন শুরুর পর থেকেই বাড়তে থাকে অনশনকারীর সংখ্যা।

 সন্ধ্যার দিকে অনশনকারীর সংখ্যা শতাধিক হয়। অনশনে একাত্মতা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা, সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক নৈমিতা মন্ডল, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন, জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষক কালিদাস দত্তসহ দশজন শিক্ষক এতে অংশ নেন।

সর্বশেষ খবর