সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

গড়াই নদী এখন শুধুই ধু-ধু বালুচর

নদীর কান্না

দেবাশীষ বিশ্বাস, রাজবাড়ী

গড়াই নদী এখন শুধুই ধু-ধু বালুচর

প্রমত্তা গড়াই নদী এখন পানি শুকিয়ে ধু-ধু বালুচর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

একসময়ের প্রবহমান প্রমত্তা গড়াই নদী এখন পানি শুকিয়ে ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর কিছুটা পানির ক্ষীণধারা থাকলেও চলতি বছরে একেবারেই নেই। গ্রীষ্মের আগেই এবার পানিশূন্য হয়ে পড়েছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ও জঙ্গল ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত প্রমত্তা গড়াই নদী। ফলে এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র ও কৃষি অর্থনীতিতে নেমে এসেছে ভয়াবহ বিপর্যয়।

যে নদীর বুক দিয়ে একসময় চলত সারি সারি নৌকা সে নদী এখন  যৌবন হারিয়ে পানির অভাবে মৃত। ইতিহাসের মানচিত্র থেকে হারিয়ে  যেতে বসেছে গড়াই নদীর অস্তিত্ব। গড়াই নদী এখন এই অঞ্চলের মানুষের কাছে একটি অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষা মৌসুমে একটু পানির দেখা মিললেও তখন ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে নদী পাড়ের মানুষ। বসতভিটাসহ নদীগর্ভে চলে যায় কৃষি ও আবাদি জমি। ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। আবার গ্রীষ্ম মৌসুমে নদী থাকে  পানিশূন্য। ফলে নদীটি কোনো কাজেই আসছে না এ অঞ্চলের কৃষকের। নদীটির এ করুণ দশার জন্য স্থানীয়রা ফারাক্কার বাঁধ, প্রতিবেশী দেশের ইচ্ছামতো পানি প্রত্যাহার, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আর প্রভাবশালীদের অবৈধ দখল ও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের মহোৎসবকেই দায়ী করছেন। ভারত ফারাক্কা ব্যারেজ চালু করার পর মরণদশা শুরু হয়েছে নদীটির। শুধু গড়াই নয়, এ গড়াইয়ের সঙ্গে উৎসমুখ হওয়ায় বালিয়াকান্দির ওপর দিয়ে প্রবাহিত চন্দনা, হড়াই ও চিত্রা নদীর এখন একই অবস্থা। প্রতি বছর বালু জমতে জমতে নদীগুলোর বুকে বিশাল বালুচর পরিণত হয়েছে। বিগত বছরগুলোয় গড়াই নদীতে একটা ক্ষীণ স্রোতধারা থাকলেও এবার পানি কমে যাওয়ার আগেই তা নেই। ফলে এ নদীটি এখন খালে পরিণত হয়েছে। নদীতে পানি না থাকায় এ অঞ্চলের পরিবেশ এবং কৃষক ও জেলেদের  জীবন-জীবিকায় নেমে এসেছে ভয়াবহ বিপর্যয়। এ অঞ্চলের মানুষের জীবনে অভিশাপ বয়ে এনেছে মরণ বাঁধ ফারাক্কা। সরেজমিন দেখা যায়, গড়াই নদীতে মাইলের পর মাইল জেগে উঠেছে বালুচর। নদীতে নেই কোনো স্রোত, নেই কোনো গভীরতা। শুধু বালু আর বালু। বালুর মধ্য দিয়ে যাতায়াত করছে সাধারণ মানুষ। অনেক জায়গায় নদীগুলোর বুক দিয়ে বয়ে চলছে বালুবোঝাই ট্রাক ও ট্রলি। নদীগুলো মরে যাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষি, বাণিজ্য, মৎস্যসম্পদ ও পরিবেশ হয়েছে বিপন্ন। হারিয়ে গেছে দেশীয় প্রজাতির অর্ধশতাধিক মাছ। কৃষি ও মৎস্যজীবীরা মানবতার জীবন-যাপন করছে। জঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, আন্তর্জাতিক নদীগুলোর সুষ্ঠু পানিবণ্টন ব্যবস্থাপনা না থাকা এবং ফারাক্কা বাঁধের নেতিবাচক প্রভাবের কারণেই এ নদীগুলো মরে যাচ্ছে। নদীগুলোকে আবার পুনরুজ্জীবিত করতে হলে দ্রুত খননকাজ শুরু করতে হবে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম শেখ জানান, গড়াই নদীর ভাঙনরোধ ছাড়া আপাতত রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো প্রকল্প হাতে নেই। তবে গড়াই নদীটি পুনঃখনন খুবই জরুরি। খনন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে ব্যাপক উন্নয়ন হবে মৎস্য ও কৃষি অর্থনীতিতে। উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, সরকার মৃত নদীগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যে বালিয়াকান্দির চন্দনা নদীটি পুনঃখনন করা হয়েছে। গড়াই নদীর খননকাজ কুষ্টিয়া থেকে শুরু হয়েছে। আশা করছি এদিকে খননকাজ শুরু করলে নদীগুলো আবার জেগে উঠবে। এ অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য অর্থনীতিতে ফিরে আসবে সুদিন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর