সোমবার, ১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

পতঙ্গখেকো সূর্যশিশির

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

পতঙ্গখেকো সূর্যশিশির

দিনাজপুর ও রংপুরের পর এবার সিলেটে দেখা মিলল ‘পতঙ্গখেকো’ উদ্ভিদ সূর্যশিশিরের। সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের ভিতরগুল গোয়াবাড়ী গ্রামে ও একই উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ হাওরের বাবনী বিলে বিরল এ উদ্ভিদটির সন্ধান পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ‘পতঙ্গখেকো’ তিনটি উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ‘সূর্যশিশির’ অন্যতম। পৃথিবীতে অনেক ধরনের মাংসাশী উদ্ভিদ রয়েছে। সাধারণত স্যাঁতসেঁতে ও জলাভূমিতে এরকম উদ্ভিদ জন্মে থাকে। জৈন্তাপুরে সন্ধান পাওয়া ‘সূর্যশিশি’রও এরকম ভূমিতে দেখা গেছে। সূর্যশিশিরের ইংরেজি নামদ ‘Sun dew’। এটি Droseraceae গোত্রের ও Drosera rotundifolia প্রজাতির উদ্ভিদ। মাংসাশী উদ্ভিদগুলোর মধ্যে আঠালো ফাঁদওয়ালা ‘সূর্যশিশিরের’ বেশ নামডাক রয়েছে। সূর্যশিশির উদ্ভিদ তিন থেকে চার ইঞ্চি হয়ে থাকে। অন্যান্য উদ্ভিদের নিচে সূর্যশিশির জন্মায়। উদ্ভিদটির পাতা দেখতে ফুলের মতো ছোট ও গোলাকার। পাতাগুলো উজ্জ্বল লাল রঙের। ওপরের দিকে থাকে লম্বা একটি কান্ড। গ্রীষ্মকালে লাল রঙের উঁচু কান্ডে দুধসাদা ফুল ফোটে। সূর্যশিশিরের পাতায় শিশিরবিন্দুর মতো চকচকে করে। মূলত এ চকচক করা আঠালো রসই হচ্ছে উদ্ভিদটির পতঙ্গ ধরার ফাঁদ। এ চকচক দৃশ্য দেখে কীটপতঙ্গ আকৃষ্ট হয়। উদ্ভিদটি বাতাসে সুগন্ধও ছড়ায়। সূর্যশিশিরের সুগন্ধ আর চকচকে আঠালো রসে আকৃষ্ট হয়ে যখনই কোনো পতঙ্গ এর ওপরে বসে তখনই আঠালো রসে আটকে যায়। কীটপতঙ্গ যতই নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায় উদ্ভিদটির বোঁটাগুলো বেঁকে গিয়ে আরও বেশি পরিমাণে আঠালো রস নিঃসৃত করতে থাকে। তখন আরও শক্তভাবে পাতায় আটকে যায় তারা। একপর্যায়ে পাতাটি কুঁচকে গিয়ে আটকা পড়া পতঙ্গের চারপাশে একটি পেয়ালার মতো আকার সৃষ্টি করে। পোকাটির দেহের নরম অংশগুলো গলে পাতায় মিশে না যাওয়া পর্যন্ত এ উদ্ভিদের পরিপাকে সাহায্যকারী এনজাইমগুলো কাজ করে। চার-পাঁচ দিন পরে সূর্যশিশিরের পাতা ও বোঁটাগুলো আবার আগের মতো সোজা হয়ে যায়। দেখে বোঝার উপায় থাকে না এটি একটি মাংসাশী উদ্ভিদ। সাধারণত সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করলেও সহায়ক পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে এরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পতঙ্গগুলোকে ব্যবহার করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর