বহুজাতিক ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠান এইচএসবিসি বাংলাদেশে তাদের রিটেইল ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর শুরু হয়েছে কর্মী ছাঁটাই প্রক্রিয়া। তিন শতাধিক কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। ইতোমধ্যে রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তাদের আলাদা মিটিং ডেকে বাধ্যতামূলক অবসরকালীন ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বহুজাতিক ব্যাংক হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী ন্যূনতম ক্ষতিপূরণ দিয়েই কর্মীদের বিদায় জানাতে চাইছে এইচএসবিসি। অথচ বিশ্বের অন্যান্য দেশে তারা বহুগুণ বেশি আকর্ষণীয় প্যাকেজ প্রদান করেছে। ফলে কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিল। চাকরি চলে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ায় নতুন চাকরি খুঁজতেও সমস্যায় পড়ছি। অনেক কর্মকর্তা কম সুদে ব্যাংক ঋণ নিয়ে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনেছেন। চাকরি হারালে সেই ঋণ শোধ করার চিন্তায় দিশাহারা তারা। চলতি বছরের ৩০ জুলাই ভোরে এক ই-মেইল বার্তার মাধ্যমে বাংলাদেশে রিটেইল ব্যাংকিং বন্ধ করার ঘোষণা দেয় এইচএসবিসি। এরপর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুব-উর-রহমানের নেতৃত্বে একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও স্পষ্ট কোনো অঙ্গীকার কর্মীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়।
কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, গ্রাহকদের আমানত ফেরত, ক্ষতিপূরণ কিংবা ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান কোনো বিষয়েই স্পষ্ট পরিকল্পনা জানাতে পারেনি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করা এইচএসবিসি ২০১১-১২ সালে প্রায় ১০০ জন কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করেছিল। তখন তাদের অন্য সেকশনে চাকরি করার সুযোগ অথবা পাঁচ বছরের বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার কেবল শ্রম আইনের ন্যূনতম ক্ষতিপূরণই প্রস্তাব করা হচ্ছে।
অন্যদিকে সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় রিটেইল ব্যাংকিং বন্ধের সময় কর্মকর্তাদের চার বছরের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ ও তিন বছরের চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সে ধরনের উদারতা দেখাচ্ছে না এইচএসবিসি। সূত্র জানায়, ক্ষতিপূরণের প্যাকেজ ঠিক করতে কাজ করছেন এইচএসবিসি বাংলাদেশের মানবসম্পদ প্রধান নাজিকা ইমাম, সিএফও জিগনেস চেতন রুপারেল, সিআরও চন্দ্র বাল গোস্বামী এবং সিওও দেবেশ মাথুর। তবে সব রিপোর্ট যাচ্ছে এইচএসবিসি ইন্ডিয়ার সিইও হিতেন্দ্র দেবের কাছে।
ব্যাংক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি বহুজাতিক ব্যাংকের উচিত স্থানীয় কর্মীদেরও বৈশ্বিক মানদণ্ডে সুরক্ষা দেওয়া। কিন্তু এবারের ক্ষতিপূরণ প্রস্তাব দেখে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশি কর্মীদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য বেশ কয়েকবার এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব-উর রহমানের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।