বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

কোয়ারেন্টাইন হোটেলে ভালো নেই নার্সরা

নিয়ম ভেঙে বহিরাগত পুরুষ বোর্ডার তুলছে হোটেল কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ ও খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ

শামীম আহমেদ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ডিএমসিএইচ) নার্সদের কোয়ারেন্টাইনের জন্য ভাড়া করা হোটেলগুলোতে গোপনে বহিরাগত পুরুষ বোর্ডার তুলছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন হোটেলে অবস্থানকারী নার্সরা। এমনকি আলো-বাতাসপূর্ণ ভালো কক্ষগুলো বহিরাগতদের জন্য রেখে তুলনামূলক খারাপ কক্ষগুলো নার্সদের দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত কক্ষ থাকার পরও একাধিক নার্সকে এক কক্ষে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। অভিযোগ রয়েছে খাবারের মান নিয়েও। ঢামেকের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টাইনের জন্য ভাড়া করা রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে অবস্থানকারী নার্সদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে গত মঙ্গলবার কয়েকটি হোটেলে ফোন করলে কক্ষ দেওয়া যাবে বলে জানানো হয়। হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে জানতে ফোন দিলে ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে হোটেলগুলোয় নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা থাকবেন সেখানে বহিরাগত কাউকে কক্ষ ভাড়া দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আছে। এভাবেই হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।

জানা গেছে, চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্টাফদের থাকা ও খাওয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ৩০টি হোটেল ভাড়া করেছে। তাদের খাওয়া বাবদ জনপ্রতি প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। রাজধানীর সেগুনবাগিচা, তোপখানা রোড, ফকিরাপুলসহ আশপাশের এলাকার অনেকগুলো হোটেলে চলছে নার্সদের কোয়ারেন্টাইন। প্রতিটি গ্রুপ সাত দিন ডিউটি করে ১৪ দিন এসব হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে যায়। তারপর পরিবারের সঙ্গে এক সপ্তাহ কাটিয়ে আবার ডিউটিতে ফেরে। গত ২০ জুন থেকে হোটেল রহমানিয়ায় শুরু হয়েছে নতুন একটি গ্রুপের কোয়ারেন্টাইন। হোটেলটিতে টস করে কিছু নার্সকে সিঙ্গেল রুম দেওয়া হয়। অন্যদের রুম ভাগাভাগির ভিত্তিতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। অথচ তখনো হোটেলে অনেকগুলো কক্ষ খালি ছিল বলে জানান নার্সরা। পরে ওই খালি কক্ষগুলোয় বহিরাগত বোর্ডার ভাড়া দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, গত সোমবার ১৬০৭ নম্বর কক্ষে থাকা একজন পুরুষ বোর্ডার হোটেল ত্যাগ করেন। মঙ্গলবার এ রিপোর্ট লেখার সময়ও ১৬১১ নম্বর কক্ষে একজন পুরুষ বোর্ডার অবস্থান করছিলেন। আর এই দুই কক্ষের আশপাশের সবগুলো কক্ষেই থাকছেন নার্সরা। এদিকে বহিরাগত পুরুষ বোর্ডার থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে মঙ্গলবার বিকালে রহমানিয়া হোটেলের মোবাইল নম্বরে ফোন করলে প্রথমে কক্ষ খালি নেই বলে জানানো হয়। অনুরোধ করলে এক হাজার টাকায় এক রাতের জন্য কক্ষ দিতে পারবেন বলে জানান। কয়েকজন নার্স অভিযোগ করে বলেন, পাশের কক্ষে পুরুষ বোর্ডার থাকায় আমরা বাইরে পানি আনতে যেতেও অনিরাপদ বোধ করি। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না। এ ছাড়া বহিরাগতদের জন্য কক্ষ রেখে আমাদের এক কক্ষে দুজন করে থাকতে দেওয়া হয়েছে। এতে একজনের করোনা থাকলে অন্যজন সংক্রামিত হতে পারে। এই হোটেলের খাবারের মানও খুব খারাপ। শুনেছি প্রত্যেকের জন্য তিন বেলায় ৫০০ টাকা বরাদ্দ, অথচ এখানে ২০০ টাকার খাবারও দেয় না। এর আগে হোটেল নিউইয়র্কে এমন বহিরাগত রাখার খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গিয়ে তাদের বের করে দেন বলে জানান কয়েকজন নার্স। তবে নিউইয়র্ক হোটেলটির খাবারের মানের প্রশংসা করেন তারা।

এদিকে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইসমত আরা পারভীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নার্সদের থাকা, পুষ্টিকর খাবার, নিরাপত্তা, যাতায়াত নিশ্চিত করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অথচ হোটেলগুলোতে খুব নিম্নমানের খাবার দিচ্ছে এমন অনেক অভিযোগ পেয়েছি। এ ছাড়া যে হোটেলে শুধু নারীরা থাকছেন, সেখানে বহিরাগত পুরুষ বোর্ডার থাকার বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা নিরাপত্তাহীনতা তৈরি ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট করছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি নিয়মিত খোঁজখবর রাখা।

সর্বশেষ খবর