শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

প্লাবিত ভূমিতে ফের স্বপ্ন বুনছে কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্লাবিত ভূমিতে ফের স্বপ্ন বুনছে কৃষক

বন্যায় প্লাবিত হয়েছে মানিকগঞ্জের বেশ কিছু এলাকা। মানিক মিয়ার ঘরেও ঢুকে পড়েছে পানি। তাই পরিবার নিয়ে এক মাসের বেশি হলো বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তার মতো আরও কয়েকটি পরিবার সেখানে আছে। ছবিটি গতকাল সিংগাইর উপজেলার পানিশাইল উচ্চবিদ্যালয় থেকে তোলা -জয়ীতা রায়

টানা ৪৬ দিনের বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে জমির ধান, পাট, ভুট্টাসহ সব ধরনের সবজি। নিঃস্ব হয়ে গেছে কৃষক। ফসলের ক্ষতির ঢেউ এসে লেগেছে রাজধানীর কাঁচাবাজার পর্যন্ত। বেড়ে গেছে কাঁচামরিচ, তরিতরকারির দাম। বন্যার পানি নামতেই আশায় বুক বেঁধে প্লাবিত জমিতে ফের বীজ বুনছে কৃষক। অনেক এলাকায় কাদা ফুঁড়ে বেরিয়েছে কচি ধানের শীষ। কৃষি বিভাগ থেকে বিতরণ করা হচ্ছে বীজ, সারসহ নানা কৃষি উপকরণ। তবে এখন পর্যন্ত সব কৃষকের হাতে পৌঁছয়নি সরকারি প্রণোদনা। তবে পর্যায়ক্রমে সব কৃষককে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গতকাল সকালের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে পদ্মা নদী ছাড়া সব প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে গেছে। পানি অব্যাহত হ্রাস পাচ্ছে। এতে দেশের অধিকাংশ এলাকার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে সরকারের হিসাবে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করে অবশেষে নেমেছে বন্যার পানি। নিঃস্ব হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। হারিয়েছে ঘরবাড়ি। বন্যার পাশাপাশি নদীভাঙন কেড়ে নিয়েছে ভিটেমাটি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফলানো ফসল হারিয়েছে কৃষক। মাছচাষি হারিয়েছে চাষের মাছ। বন্যার পানি নামলেও ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও বাড়িঘরে কাদা থাকায় এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি ৩৩ জেলার ৫০ লক্ষাধিক মানুষ। ঘরে নেই খাবার। হাতে নেই টাকা-পয়সা। দূষিত পানিতে ডুবে যাওয়ায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে টিউবওয়েল। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট। সরকার ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রাখলেও চাহিদার তুলনায় তা অপর্যাপ্ত। পেটে ক্ষুধা আর মনে সব হারানোর বেদনা থাকলেও ফের জমিতে ফসল ফলাতে কোমর বেঁধে নেমেছে কৃষক।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-

রাজশাহী : বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে এবার রাজশাহীতে বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। কৃষি ও মৎস্য বিভাগের হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। সরকার এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের প্রণোদনা দিতে শুরু করেছে। রংপুর : বন্যায় এ অঞ্চলে ১৪ হাজার হেক্টর জমির ১৭৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এই অঞ্চলের পাঁচ জেলায় রোপা আমন, আউশ, পাট, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে আমনের চারা সংকটে পড়েছে কৃষক।

কুড়িগ্রাম : বন্যায় এ জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমন বীজতলার। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নতুন করে আমন চারা লাগাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। কৃষকদের বিনামূল্যে আমন বীজ প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিভাগ।

 কৃষকদের ঘাটতি কমাতে সরকারি উদ্যোগে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি বীজতলা, ভাসমান বীজতলা ও বাড়ির ভিতর প্লেট পদ্ধতিতে বিকল্প বীজতলা তৈরিতে এগিয়ে এসেছে জেলা কৃষি বিভাগ। সরকারি প্রণোদনায় এসব বীজ বিনামূল্যে পেয়ে নতুন উদ্যমে মাঠে নেমেছে অনেক কৃষক। জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর বন্যায় কুড়িগ্রামে ১৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার কৃষক। বিপর্যয় থেকে কৃষকদের ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের নির্দেশনায় সব ধরনের সহযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিভাগ।

টাঙ্গাইল : কয়েক দফা বন্যায় চার হাজার ৬৮০ জন মৎস্যচাষি ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে। জেলায় পাঁচ হাজার ৩২৭টি পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে সব ধরনের মাছ ভেসে গেছে। এতে মাছচাষিরা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। তারা এখনো সরকারি প্রণোদনার অপেক্ষায় দিন গুনছে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, বন্যায় আনুমানিক এক হাজার ২০৭  মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে, যার দাম ১৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এদিকে এক কোটি ৭৫ লাখ মাছের পোনা ভেসে গেছে, যার দাম চার কোটি ১০ লাখ টাকা। এছাড়া অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া বলেন, এবারের বন্যায় টাঙ্গাইলে ২৭ কোটি টাকার ওপরে মৎস্য খাতের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সরকারি আর্থিক সাহায্যের বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর