বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বাংলাদেশে বাণিজ্যে আগ্রহী ইরাক

ব্যবসায়ীদের তালিকা চেয়ে দূতাবাসের চিঠি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলা করে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ ইরাক অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আর সেই প্রচেষ্টা থেকে এবার দেশটি বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে চায়। ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন নাজাফ চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায় আগ্রহ দেখিয়ে দূতাবাসে চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে ইরাকের সঙ্গে বাণিজ্যে আগ্রহী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের তালিকা পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, সম্প্রতি বাগদাদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ইরাকের কেন্দ্রীয় ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স ছাড়াও বিভিন্ন প্রদেশে অবস্থিত চেম্বার অব কমার্স নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গত ৩০ নভেম্বর নাজাফ চেম্বারের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যবসায়ীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের উদীয়মান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার বিষয় তুলে ধরা হয়। এতে ইরাকের ব্যবসায়িরা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাগদাদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স ও প্রথম সচিব (শ্রম ও কল্যাণ) আবু সালেহ মোহাম্মাদ ইমরান গত ৪ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ ইরাকে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরির বড় সুযোগ রয়েছে। আমরা সেই সুযোগটি নিতে চাই। দুই দেশের ব্যবসায়িদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। 

দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়েছে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকা সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে ইরাক। উদীয়মান মধ্যবিত্তশ্রেণি ও তেল সমৃদ্ধ অর্থনীতি দেশটিকে পণ্য ও সেবার একটি সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে আবির্ভূত করতে সাহায্য করছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ছাড়াও ভারত, চীন, কোরিয়ার মত দেশগুলো নিজেদের বাজার তৈরি করছে দেশটিতে। সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশেরও। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় ইরাকে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দেশটিতে তৈরি পোশাক ছাড়াও ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক, নিউজপ্রিন্ট, পেপার ও পেপারবোর্ড, শাক-সব্জি, জুট ইয়ার্ন, কম্প্রেসর এবং চাসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়। এরইমধ্যে ইরাকের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে প্রযুক্তিপণ্য নিতে এ দেশের ব্রান্ড কোম্পানি ওয়ালটনের সাথে চুক্তি করেছে।

সূত্র জানায়, ইরাকে রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে লক্ষ্যে বাগদাদের খ্যাতনামা প্রযুক্তিপণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান আশ্রকাত আলনারজেস জেনারেল কোম্পানির সঙ্গে ওয়ালটনের একটি চুক্তি হয়েছে। ইরাকে ওয়ালটন পণ্যের পরিবেশক করা হয়েছে তাদের। নিজস্ব ব্র্যান্ডের নামেই কম্প্রেসর রপ্তানির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে বাংলাদেশের ব্রান্ড ওয়ালটন। ইরাক রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, টিভিসহ অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্য নেবে বাংলাদেশ থেকে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ইরাকের দু’টি বৃহত্তর বাণিজ্য অংশীদার ইরান ও তুরস্ক। এরইমধ্যে ইরানের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আর তুরস্কের সাম্প্রতিক মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে ইরাকের ব্যবসায়ি সম্প্রদায় বিকল্প উৎস্য হিসেবে অন্য দেশগুলোকে বিবেচনায় নিচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় বানিজ্য সম্প্রসারণের এই সুযোগটি বাংলাদেশ নিতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর