বুধবার, ৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ হাই কোর্টে

অডিও-ভিডিও দাখিলের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের ঘটনায় এক দম্পতির কাছে ঘুষ চেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর, এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে হাই কোর্টে। গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাই কোর্ট বেঞ্চে একটি রিট আবেদনের শুনানিতে এ অভিযোগ তোলা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন চেয়ে দুদকে আবেদন জানিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে রিটে উল্লেখ করেছেন দুর্নীতি মামলার দুই আসামি। শুনানিতে রিটকারীর আইনজীবী জানান, ঘুষ চাওয়ার প্রমাণস্বরূপ অডিও-ভিডিও সংরক্ষিত রয়েছে তাদের কাছে। পরে ৭ মার্চের মধ্যে সেই অডিও-ভিডিও ক্লিপ সিডি আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামাল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। নথিসূত্রে জানা গেছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য জানাতে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ মো. আবদুল কুদ্দুস হাওলাদার ও তার স্ত্রী মাহিনুর বেগমকে নোটিশ দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। আবদুল কুদ্দুস হাওলাদার ঢাকা সদরের সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার এবং বর্তমানে তিনি পিরোজপুরের জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত। দুদকের (ঢাকা-১) উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ওই নোটিশ দেন। তবে নোটিশের উপযুক্ত জবাব না মেলায় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর ওই দম্পতিকে আসামি করে মামলা করে দুদক। ২৪ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন, ৯০ লাখ ১২ হাজার ৭৯৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তা দখল রাখার অপরাধের জন্য দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর এবং চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন চেয়ে আবেদন জানান মো. আবদুল কুদ্দুস হাওলাদার ও তার স্ত্রী মাহিনুর বেগম। আবেদনে আবদুল কুদ্দুস হাওলাদার অভিযোগ করেন, ‘২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা সদর সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে আমি নিয়োজিত ছিলাম। ওই সময় এক গণশুনানির মাধ্যমে জনৈক উমেদারের অনৈতিক চাহিদার দায় আমার ওপর চাপিয়ে ২০১৮ সালে দুদক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ গঠন করে। অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীরকে নিয়োগ দেওয়া হয়।’ অভিযোগে আবদুল কুদ্দুস আরও বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে নোটিশ প্রেরণ করেন এবং তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বললে আমি ও আমার ভাই তার সঙ্গে দেখা করি এবং আমাদের মোবাইল নম্বর দিয়ে আসি। পরে তদন্ত কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর দিয়ে আমার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং অনৈতিকভাবে টাকা দাবি করেন। এ বিষয়ে আমি অপরাগতা প্রকাশ করলে তদন্ত কর্মকর্তা ক্ষুব্ধ হয়ে আমার দাখিলকৃত সম্পদবিবরণী আমলে না নিয়ে নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। পরবর্তী সময়ে আদালত থেকে স্থায়ী জামিনপ্রাপ্ত হই।’ তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে আবেদনের বিষয়বস্তু বিবেচনা করে একজন নিরপেক্ষ তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ প্রদানের দাবি জানান মামলার আসামিরা। তবে আসামিপক্ষের আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি দুর্নীতি দমন কমিশন। তাই প্রতিকারের আশায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন চেয়ে হাই কোর্টে রিট দায়ের করেন মামলার দুই আসামি ওই দম্পতি। রিটে ‘দুদকে দায়ের করা আবেদন’ নিষ্পত্তির আবেদন জানানো হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, রিটের শুনানিতে আদালত রিটকারীর আইনজীবীর কাছে জানতে চান, তদন্ত কর্মকর্তা যে তাদের কাছে অর্থ দাবি করেছেন, এর পক্ষে কোনো প্রমাণ আছে কি না? জবাবে রিটকারীর আইনজীবী বলেন, ‘আমাদের এ বিষয়ে অডিও-ভিডিও রয়েছে।’ পরে সেই অডিও-ভিডিও ৭ মার্চের মধ্যে সিডি আকারে হাই কোর্টে দাখিল করতে আদালত আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তদন্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দুদক কর্মকর্তা যদি অনৈতিক লেনদেনের সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করে থাকেন, তবে তা হবে বেআইনি। আশা করছি আদালতে বিষয়টির সুরাহা হবে।’

সর্বশেষ খবর