বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখা খুব জরুরি

-ফারুক হাসান

ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখা খুব জরুরি

বিজিএমইএ নির্বাচনে জয়ী সম্মিলিত পরিষদের দলনেতা হিসেবে সভাপতির আসনে বসার অপেক্ষায় থাকা ফারুক হাসান বলেছেন, পোশাকশিল্পের ওপর করোনা মহামারীর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগই পোশাকশিল্পের ওপর নির্ভর করে। সুতরাং এ শিল্পকে সক্রিয় রাখা জাতীয় দায়িত্ব। এ শিল্প একদিকে জাতীয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে, অন্যদিকে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে প্রতিনিয়ত। সে ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হওয়া খুব জরুরি। এ অঙ্গীকার পালনে সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকব এবং দেশের পোশাকশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সব ধরনের চেষ্টা  অব্যাহত রাখব। সবাই মিলেই দেশের পোশাকশিল্পের উন্নয়নযাত্রা শানিত করতে চাই।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন ২০ এপ্রিল বিজিএমইএ সভাপতির আসনে বসতে যাওয়া সংগঠনটির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান। দেশের অন্যতম পোশাকপণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জায়ান্ট গ্রুপের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার প্রধান লক্ষ্য হবে একটি শক্তিশালী, একতাবদ্ধ বিজিএমইএ গঠন। এ নির্বাচনে যারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন এবং যারা সমর্থন দেননি এ দুই পক্ষেরই নেতা হিসেবে আগামীর পথটুকু চলতে চাই। এ ক্ষেত্রে আগামী দিনে এ শিল্পের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা সবচেয়ে বড় কাজ হবে। এর পাশাপাশি পোশাকশিল্পের বাজার সম্প্রসারণ, পণ্য বহুমুখীকরণ এবং উন্নতমানের পণ্য তৈরিতেও নজর দেব।

তার মতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ উইথ প্রাইড’ স্লোগান নিয়ে পৃথিবীর ১৬০টির অধিক দেশে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকাকে সমুজ্জ্বল করেছে আমাদের পোশাকশিল্প। করোনার কারণে পোশাকশিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করে পোশাকশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হবে, এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। আমি পোশাকশিল্পের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কাজ এগিয়ে নিতে চাই। আবারও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব, যাতে তারল্য সংকট মোকাবিলা করে কারখানাগুলো সচল রাখতে পারি। আমরা কেউ ভালো নেই।

তিনি বলেন, আমাদের প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপ ও আমেরিকান মার্কেটে ক্রেতাদের ক্রয় আচরণ ও সামগ্রিক বাজারের ক্রয়ক্ষমতায় পরিবর্তন এসেছে। এ কারণে রপ্তানির পরিমাণ পরিবর্তিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার সম্প্রসারণ করাই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামীতে কভিডসৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় সরকারের নীতিসহায়তার মাধ্যমে ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইন্ডাস্ট্রি লিডারদের সঙ্গে নিয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করব। সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে নীতিসহায়তার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে টেকসই করার জন্য কাজ করব। ব্যবসা থেকে প্রস্থানের সহজ নীতিমালা, কাস্টমস ও ভ্যাট নীতিমালার সংস্কারসহ দেশের পোশাক খাত ও পোশাকমালিকদের ইমেজ বৃদ্ধির জন্য কাজ করব। আগামী দুই বছরে অতীতের মতো সংকটকে সম্ভাবনায় পরিণত করে সম্মিলিত মেধা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে শিল্পের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে নিজেকে উৎসর্গ করব।

ফারুক হাসান বলেন, আমাদের সম্মিলিত পরিষদের পক্ষে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মোতাবেক কভিড মোকাবিলা ও শিল্প পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ১৮ মাস থেকে বৃদ্ধি এবং কিস্তির আকার ছোট করার উদ্যোগ নেব। সংকট প্রতিকারে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। শিল্পের পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সরকারের কাছে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি নীতিসহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হবে। ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু ব্যাংকিং নীতিমালার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাকশিল্পের জন্য সুদের হার এবং ব্যাংকিং চার্জ কমানোর ব্যাপারে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিসহায়তা চাওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী ও অন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় পোশাকশিল্পের জন্য কমপ্লায়েন্স সুবিধা নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো ও ভবন নির্মাণের জন্য সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হবে, যাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পমালিকরা স্বল্পমূল্যে ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করব। শ্রমিকদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে অঞ্চলভিত্তিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

তিনি বলেন, বিজিএমইএর আরবিট্রেশন সেবাকে ডিজিটাল করা এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হবে। সরকার ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কার্যকর আলোচনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যাতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরও কমপক্ষে ২০৩১ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানি সুবিধা অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে পোশাকের শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা অব্যাহত রাখতে বিজিএমইএ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এ টাস্কফোর্স প্রয়োজনীয় ধাপগুলো সম্পাদনের পাশাপাশি অ্যাপারেল ডিপ্লোম্যাসির মাধ্যমে জিএসপি প্লাস সুবিধা নিশ্চিত করবে। চীনে শুল্কমুক্ত পণ্যের তালিকায় পোশাকশিল্পের নিয়মিত পণ্যগুলো অন্তর্ভুক্তকরণ, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির জন্য বৃহৎ দেশগুলোয় প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোয় পৃথক আরএমজি ডেস্ক প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হবে। বিজিএমইএ ও কাস্টম বন্ডের যৌথ কমিটি গঠন করে সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হবে।

সর্বশেষ খবর