দেশজুড়ে সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন চলাকালে রাজধানীতে পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশ সদস্য ও ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়েছেন এক নারী চিকিৎসক। পুলিশ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট বারবার অনুরোধ করেও তার কাছ থেকে মুভমেন্ট পাস বা কোন মেডিকেলের চিকিৎসক পরিচয়পত্র বের করতে পারেননি। গতকাল দুপুরে এলিফ্যান্ট রোডে পুলিশ চেকপোস্টে ওই নারীর কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চায় পুলিশ। এতে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করে একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের গালিগালাজ করতে থাকেন। হুমকি দেন চাকরিচ্যুত করার। ওই নারীর আচরণের এমনি একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে পুলিশ সদস্য ও ম্যাজিস্ট্রেটকে বারবার নমনীয়ভাবে কথা বলতে দেখা যায়। কিন্তু ওই নারী তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে থাকেন। ৫ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই নারী পুলিশকে বলেছেন, ‘করোনায় জীবন গেছে কয়জন ডাক্তারের, আর আপনারা কতজন মরছেন। আমার কাছে আবার চান মুভমেন্ট পাস।’ এরপরই পাল্টে যায় পরিস্থিতি। পুলিশের এক সদস্য ওই নারীকে বলেন, আপনি ধমক দিচ্ছেন কেন? জবাবে নারী বলেন, ‘আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলীর মেয়ে।’ পুলিশও বলে, ‘আমিও মুক্তিযোদ্ধার ছেলে। আপনি আমাকে শোনাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার কথা।’ এ সময় নিজেকে চিকিৎসক দাবি করা ওই নারী পুলিশকে বলেন, ‘ডাক্তার হয়রানি বন্ধ করতে হবে। আমি বিএসএমএমইউ প্রফেসর, বীর বিক্রমের মেয়ে। আমাকে আপনারা হয়রানি করতে পারেন না।’ পরে পুলিশের আরেক সদস্য বলেন, ‘আপা আপনাকে তো হয়রানি করা হচ্ছে না। আপনার কাছে পরিচয়পত্র চাওয়া হচ্ছে।’ এর পরে নিজ গাড়িতে ওঠে যান ওই নারী চিকিৎসক। তখন পুলিশের এক সদস্য ওই নারীকে বারবার বলেন, ‘আপনি আমাকে তুই তুই করে বলছেন কেন? তখন ওই নারী পুলিশকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তুই মেডিকেলে চান্স পাস নাই, তাই তুই পুলিশ। আমি চান্স পাইছি, তাই আমি ডাক্তার।’ একপর্যায়ে পুলিশকে তিনি হয়রানি করলে আন্দোলনের হুমকি দেন। জবাবে পুলিশ বলছে, আমাদের আন্দোলনের ভয় দেখাচ্ছেন। আর আমি কে, সেটা এখন তোদের দেখাচ্ছি হারামজাদা। এই কথা বলে ওই নারী এক ‘মন্ত্রীকে’ ফোন করেন। ফোনে তাকে হয়রানি করার কথা বলেই পুলিশ সদস্যের হাতে তার ফোন তুলে দেন কথা বলার জন্য। তারপরও পুলিশকে পরিচয়পত্র দেখাননি তিনি।
চিকিৎসককে হয়রানির প্রতিবাদ : রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের চেকপোস্টে নারী চিকিৎসককে পুলিশ হয়রানি করেছে দাবি করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবলিটিজ (এফডিএসআর)। গতকাল সংগঠনের চেয়ারম্যান ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন ও মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের প্রথম দিনেই বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক কর্তব্যকাজে যাওয়ার পথে পুলিশের হাতে হেনস্তার শিকার হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এফডিএসআরের প্রতিবাদের মুখে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এ ধরনের হয়রানি বন্ধের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল।