বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

রাজধানীতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬.৮৮ শতাংশ : ক্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা মহামারীর কারণে মানুষের আয় কমলেও ২০২০ সালে রাজধানীতে জীবনযাত্রার ব্যয় ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ ও সেবা-সার্ভিসের দাম ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। তিনি বলেছেন, তিন বছর ধরে ঢাকায় টিকে থাকতে মানুষকে বেশি বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। তবে ২০২০ সালে ব্যয় বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘জীবনযাত্রার ব্যয় ও ভোক্তা স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন-২০২০’ প্রকাশ করে ক্যাব। প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে গোলাম রহমান বলেন, ২০২০ সালে রাজধানীতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং সেবা-সার্ভিসের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০১৯ সালে এটি ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ ও ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা ছিল ৬ শতাংশ ও ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। তিন বছরের মধ্যে ২০২০ সালে রাজধানীতে থাকতে সবচেয়ে বেশি খরচ করতে হয়েছে মানুষকে। অন্যদিকে এ সময়ে করোনা মহামারীর প্রভাবে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের আয়-রোজগার ব্যাপকভাবে কমেছে। ফলে ২০২০ সালে এ শ্রেণির ভোক্তাদের জীবনমান বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি জানান, রাজধানীর ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবা-সার্ভিসের মধ্য থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য, ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী ও ১৪টি সেবা-সার্ভিসের সংগৃহীত মূল্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে ক্যাব। এতে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে চালের দাম গড়ে ২০ শতাংশ, আটার দাম ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, ভোজ্য তেলের দাম ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ, দেশি ও আমদানি করা ডালের দাম ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ, মসলার দাম ২৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ, শাকসবজির দাম ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ, গরু-খাসির মাংসের দাম ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, মুরগির দাম ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ডিমের দাম ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ, মাছের দাম ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ ও গুঁড়াদুধের দাম ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের বাড়িভাড়া গড়ে বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ওয়াসার পানির দাম প্রতি হাজার লিটারে ২৫ শতাংশ, আবাসিকে বিদ্যুতের দাম ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং বাণিজ্যিকে বিদ্যুতের দাম ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে। তবে এই সময়ের ব্যবধানে সরিষা তেলের দাম কেজিতে ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, ডালডার দাম ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ ও খোলা আটার দাম ২ দশমিক ২৩ শতাংশ কমেছে। অপরিবর্তিত ছিল লবণ, চা-পাতা, দেশি-বিদেশি কাপড়, গেঞ্জি, তোয়ালে ও গামছার দাম। বিদ্যুৎ খাতে দেওয়া সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির সুফল ভোক্তারা পাননি উল্লেখ করে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মূলত বেসরকারি অলস বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে এই অর্থ ব্যয় হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। বিশ্বব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আইএফসির সমীক্ষা অনুযায়ী করোনার কারণে এসব খাতে কর্মরত ৩৭ শতাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। অন্যান্য খাতেও কর্মসংস্থান কমেছে। অনেক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী ছাঁটাই এবং বেতন কমানো হয়। এতে নিম্নআয়ের মানুষ আরও বিপাকে পড়েছে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আবদুল হান্নান। সংবাদ সম্মেলনে আরও যুক্ত ছিলেন ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, ক্যাবের ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর