মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

খুনটি পারিবারিক সিদ্ধান্তের

মির্জা মেহেদী তমাল

খুনটি পারিবারিক সিদ্ধান্তের

ষাটোর্ধ্ব সুভাষ রাতে বাড়ির সামনে নদীর ঘাটে তাদের নৌকায় ঘুমান। কিন্তু হঠাৎ এক রাতে তাকে নৌকায় পাওয়া যাচ্ছিল না। সুভাষের ছেলে সুজিত চন্দ্র সরকার (৩২) প্রতিবেশীদের নিয়ে তাকে খুঁজতে বের হন। নৌকার অদূরে নদীর পানিতে গলায় ও পায়ে রশি বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায় সুভাষের লাশ। বাবার এমন ভয়ানক পরিণতিতে সুজিতের কান্না ও চিৎকার শুনে ছুটে আসে পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ স্থানীয়রা। সুজিত খবর দেন পুলিশকে। খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুভাষের লাশ উদ্ধার করে। পরদিন সুভাষের মেয়ে নীভা রানী তালুকদার স্থানীয় থানায় মামলা করেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। খুনের কোনো সূত্র খুঁজে পায় না পুলিশ। তবে পুলিশের কানে পৌঁছে যায় তাদের পারিবারিক কিছু কলহের কথা। পুলিশ ভাবে ঘর থেকেই তবে শুরু হোক তদন্ত।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুজিতসহ সুজিতের স্ত্রী খেলা রানী সরকার ও তার মা আরতী রানী সরকারকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূ হত্যার দায় স্বীকার করেন। পরে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আর এতেই বেরিয়ে আসে হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘটনাটি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর এলাকার।

মধ্যনগর থানার ওসি নির্মল দেবের ভাষ্যমতে, বিকৃত মানসিকতার অধিকারী ও নারী লোভী ব্যক্তি সুভাষ শারীরিকভাবে ছিল শক্তপোক্ত। সুযোগ পেলেই তিনি যে কোনো নারীকে যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে ধর্ষণ করতেন। যা তার পুত্রবধূ তাদের জানিয়েছেন। সুভাষের বিকৃত যৌনাচার থেকে রেহাই পাননি পুত্রবধূ, ভাগ্নি, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী। বিষয়টি নিয়ে সুভাষের পরিবারের লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। দিনদিন সুভাষের বিকৃত আচরণ বেড়েই চলছিল। পরিবারের লোকজন চেষ্টা করেও তাকে এ কাজ থেকে ফেরাতে পারেনি। ফলে তারা এসব নীরবে সহ্য করে যাচ্ছিল। এমতাবস্থায় তারা কী করবে ভেবে উঠতে পারছিল না। লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলতেও পারছিলেন না তারা। ফলে সুভাষের স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূ এ হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা আঁটে।

সুভাষ বাড়ির পূর্বপাশে নদীর ঘাটে প্রায় রাতেই নৌকায় ঘুমান। ১৮ আগস্ট সন্ধ্যায় সুভাষের স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূ সুভাষকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। হত্যার উপকরণ হিসেবে নিজেদের গোয়ালঘর থেকে সংগ্রহ করা হয় রশি। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তারা রশি দিয়ে সুভাষের পা বাঁধে এবং গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। যাতে কেউ সন্দেহ না করে সেজন্য সুভাষের ছেলে প্রতিবেশীদের জানায়, তার বাবাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

মধ্যনগর থানার ওসি নির্মল দেব খবর পাওয়া মাত্রই ফোর্স নিয়ে সেখানে গিয়ে রাত আড়াইটার ধর্মপাশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকারের উপস্থিতিতে সুভাষের লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ তখন থেকেই সুভাষের পরিবারের লোকজন, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের পর্যায়ক্রমে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। এদিকে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হলেও পুলিশ কৌশলে তার তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যেতে থাকে। পরদিন সুভাষের স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূ পুলিশের কাছে হত্যার অভিযোগ স্বীকার করলে তাদের আটক করে আদালতে পাঠানো হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর