মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

পিনন-হাদির দুয়ার খুলছে পাহাড়ে

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

পিনন-হাদির দুয়ার খুলছে পাহাড়ে

ঐতিহ্যবাহী পিনন-হাদির বাজার আবার জমজমাট হওয়ার প্রত্যাশায় কারিগররা -ফাইল ছবি

করোনায় থমকে গিয়েছিল পাহাড়ের ঐতিহ্য ‘পিনন-হাদি’। লকডাউন উঠতেই সে ধাক্কা কাটানোর চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে হাটবাজার থেকে অনলাইন পর্যন্ত সরব হয়েছে ব্যবসায়িক কার্যক্রম। ‘পিনন-হাদি’ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিধানের বিশেষ বস্ত্র। যা তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ১০ ভাষাভাষীর ১৪ নৃগোষ্ঠীর নারীদের জন্য প্রধান ও ঐহিত্যবাহী পোশাক। শুধু এখানেই থেমে নেই পিনন-হাদি। পাহাড় ছাড়িয়ে এটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও।

এখন রাঙামাটির বনরূপায় সাপ্তাহিক হাটবাজার ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই বসছে পিনন-হাদির হাট। শুরু হয়েছে জমজমাট বেচাকেনা। তাই ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন নৃগোষ্ঠীর নারীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিনন-হাদিতে থাকে রেশমি সুতার নিখুঁত হাতের কাজ। থাকে আকর্ষণীয় ডিজাইন। তাই যে কোনো মানুষকেই এ পিনন হাদি আকর্ষণ করে সহজেই। এ পোশাক দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। চাহিদা অনেক, লাভও বেশি।

পিনন-হাদি বিক্রেতা মেনটেলা চাকমা বলেন, রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে এসব কাপড় খুবই প্রিয়। কিন্তু করোনা আর লকডাউনের জন্য দীর্ঘদিন এ ব্যবসা স্থবির ছিল। অনেকটা বেকার সময় কাটছিল সবার। কিন্তু এখন আবারও ব্যবসা চাঙা তোলার কাজে নেমেছি সবাই। পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারব। আরেক বিক্রেতা জ্যোতিকা চাকমা বলেন, শুধু  পিনন-হাদি নয়, আমরা কোমর তাঁতে তৈরি করছি সুতি-রেশম-মাসলায়স ও জরির পোশাক। তৈরি করছি থ্রি-পিস, ফ্লোর ম্যাট, ডিনার ম্যাট, শাল, ব্যাগ, স্কুলব্যাগ, চাদর, রুমাল, গামছা। তিনি জানান, এক জোড়া পিনন-হাদি ১ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। রাঙামাটির রাঙাপানি এলাকার কোমর তাঁতি কল্পনা চাকমা জানান, নিজেদের প্রয়োজনেই এক সময় পিনন হাদি তৈরি করা অত্যাবশ্যকীয় ছিল। কিন্তু এখন আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে কোমর তাঁতে পিনন-হাদি তৈরি করছেন। একজোড়া পিনন হাদি তৈরিতে একজন নারীর সময় লাগে দশ থেকে পনের দিন। এখন পাহাড়ের বেশির ভাগ নারীই নিজেদের উদ্যোগে পিনন তৈরির ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। কারণ পিনন-হাদি ঘরে বসে কোমর তাঁতে তৈরি করা যায়, তার জন্য কোনো শিল্প-প্রতিষ্ঠানে যেতে হয় না। বিশেষ করে অবসর সময়টা কাজে লাগাতে পারেন তারা এ বস্ত্র তৈরিতে। এক সময় জুমের তুলা থেকে সুতা তৈরি করে তাঁতে বুনন হতো এসব বস্ত্র। এখনো এসব সুতা বাজারে পাওয়া যায়। তবে দাম একটু বেশি। তাই কাপড় তৈরি ব্যবসায় হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেককেই। তার মতে, পিনন-হাদি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নারীদের সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়া হলে আরও অনেক বেকার যুবক-যুবতী নিজেদের আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলতে পারবেন।

 

 

সর্বশেষ খবর