শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

অনন্য নিদর্শন হিন্দা-কসবা শাহি মসজিদ

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

অনন্য নিদর্শন হিন্দা-কসবা শাহি মসজিদ

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার নিভৃত পল্লী হিন্দা-কসবায় অবস্থিত ঐতিহাসিক হিন্দা-কসবা শাহি জামে মসজিদটি সুনিপুণ নির্মাণশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন। মুঘল স্থাপত্যের অনুকরণে তৈরি এই মসজিদটি আজও সবার কাছে দৃষ্টিনন্দন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ ছাড়া মসজিদের দেয়ালে বিভিন্ন রঙের কাচ, মার্বেল পাথর ও সিরামিকের টুকরো বসিয়ে অলঙ্করণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

জানা গেছে, এ মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা চিশতিয়া তরিকার অন্যতম পীর হজরত খাজা শাহ মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল গফুর চিশতী (রহ.) কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থেকে ষাটের দশকে অত্র এলাকায় আস্তানা গড়ে তোলেন এবং বাংলা ১৩৬২ সালে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ৩ বছর লেগে যায় সম্পূর্ণ মসজিদটির নির্মাণকাজে। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪৯.৫ ফুট, প্রস্থ ২২.৫ ফুট। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের সঙ্গে মিল রেখে, পাঁচটি গম্বুজ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মসজিদটি। বড় গম্বুজটি রয়েছে মাঝখানে, বাকি চারটি গম্বুজ রয়েছে চার কোনায়, যা বড় গম্বুজটির সঙ্গে সংযুক্ত। মসজিদটির ছাদ পাঁচটি গম্বুজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হলেও এগুলো নির্মাণে কোনো লোহার রড ব্যবহার করা হয়নি। মাঝখানের বড় গম্বুজের ভিতরের অংশে ‘আয়াতুল কুরসি’ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লেখা রয়েছে। মসজিদটির উত্তর-পূর্ব কোণে রয়েছে চার তলাবিশিষ্ট  ৪০ ফুট উচ্চতার একটি মিনার। মসজিদটির পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন শাহ এলেমজি (রহ.) ও শাহ কালেমজি (রহ.)। প্রতিবছর রবিউল আউয়াল মাসের ৯ তারিখে মসজিদ চত্বরে ওরস উপলক্ষে হালকায়ে জিকির অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে জেলার বাইরে থেকে প্রায় ২০-২৫ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত নারী-পুরুষ প্রতিদিন মসজিদটি দেখতে আসেন। মসজিদে এসে যাতায়াত সমস্যায়ও পড়তে হয়। রিকশা-ভ্যানযোগে  উপজেলা সদর থেকে ৮-১০ কিলোমিটার যেতে হয়। এ ছাড়াও নিভৃত পল্লীতে অবস্থিত হওয়ায় থাকা-খাওয়ার সমস্যায়ও পড়তে হয় দর্শনার্থীদের। দূরের কোনো দর্শনার্থী এলে তাকে জয়পুরহাট শহরে রাতযাপন করতে হয়। এজন্য এলাকাবাসীর দীর্ঘদিন থেকে ক্ষেতলাল উপজেলা সদরে একটি মানসম্পন্ন ডাকবাংলো গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে আসছেন। আর ডাকবাংলো স্থাপন করতে পারলে একদিকে দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কিছুটা লাঘব হবে অন্যদিকে দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখরিত হবে হিন্দা-কসবা শাহি জামে মসজিদটি এবং পর্যটন শিল্পে অবদান রাখবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে। মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল হাসান বলেন, এ মসজিদটি দেখতে এসে অনেকে এর নির্মাণ কৌশল দেখে অভিভূত হন। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা করেন।

সর্বশেষ খবর