সোমবার, ৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিদ্রোহী নিয়ে কৌশলে আওয়ামী লীগ

নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে কোথাও কোথাও বিদ্রোহীদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আবার কোথাও কঠোরতা দেখানো হচ্ছে। বিগত বছরের বিদ্রোহীদের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না

রফিকুল ইসলাম রনি

বিদ্রোহী নিয়ে কৌশলে আওয়ামী লীগ

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে দুই রকম কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে কোথাও কোথাও বিদ্রোহীদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আবার কোথাও কঠোরতা দেখানো হচ্ছে। বিগত বছরের বিদ্রোহীদের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। ঢাকা সিটিতে যারা বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছিলেন উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি গঠনে তাদের পদন্ডপদবিতে রাখা হচ্ছে না। 

দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ চায় আওয়ামী লীগ। এ জন্য বিনা ভোটে বিজয়ী হওয়ার প্রবণতাকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে দলের হাইকমান্ড মনে করছে, স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী বিজয়ী হতে থাকলে দেশ-বিদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হবে। এতে ক্ষতি আওয়ামী লীগেরই বেশি। এই সমালোচনা থেকে মুক্ত থাকতেই প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে দুই রকম কৌশল নেওয়া হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কেউ বিনা ভোটেই নির্বাচিত হোক-এটা চায় না দলের হাইকমান্ড। দ্বিতীয় ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ৮১ জন বিনা ভোটেই নির্বাচিত হয়েছেন। সে কারণে বিদ্রোহীদের নিয়ে নানা হাঁকডাক দিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্বার্থে দুই নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। যেখানে ‘স্বতন্ত্র’ হিসেবে বিএনপির প্রার্থী মাঠে আছে সেখানে দলীয় বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর যেখানে বিএনপির ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী নেই, সেখানে দলীয় বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কিছুটা শিথিলতা দেখানো হচ্ছে। কেননা প্রার্থী না থাকলে অনেকে বিনা ভোটে বিজয়ী হতেন। এতে ভোটের আমেজ হারাত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এমন একাধিক প্রার্থী জানিয়েছেন, ভোটারদের সহানুভূতিসহ কৌশলগত নানা সুবিধা পাওয়ার জন্য বিদ্রোহী অনেকেই নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে দলীয় চাপ দেওয়ার কথা বলে বেড়ালেও বাস্তবে তা ঠিক নয়। দল মনোনীত প্রার্থীর প্রতিপক্ষ যেখানে ‘স্বতন্ত্র’ বিএনপির প্রার্থী রয়েছে সেখানে দলীয় বিদ্রোহীদের সরে দাঁড়াতে চাপ দিচ্ছে। স্থানীয়ভাবে কোথাও কোথাও বহিষ্কারও করা হচ্ছে। আর যেখানে প্রতিপক্ষ নেই সেখানে দলের চাপ নেই। প্রার্থীরা আরও জানান, দল থেকে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি সত্য, কিন্তু স্থানীয় এমপি ছাড়াও দলের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের মৌখিক অনুমিত দিয়েছেন। গত সোমবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভার্চুয়াল এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ছলে-বলে কৌশলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত হলে অথবা হওয়ার চেষ্টা করলে তা শৃঙ্খলাবিরোধী অপকর্ম বলে গণ্য করা হবে। এ জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে। দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ভোট করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই সংঘর্ষ ও নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হোক তা চায় না দলের হাইকমান্ড। সে কারণে ‘ক্ষমতার’ প্রভাবে কাউকে যেন হয়রানি  করা না হয় সেজন্যও নিদের্শনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকে। তার মধ্যে থেকে আমরা একজনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ন নির্বাচনে যার জনপ্রিয়তা থাকবে সেই বিজয়ী হবে। কেউ যেন অহেতুক হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন উৎসবমুখর হোক, এটা আমরা চাই। একতরফা বিজয়ী হওয়ার কোন আনন্দ নেই। উন্নয়নের স্বার্থে মানুষ নৌকাকেই ভোট দেবে। তবে এটা ঠিক যে, যেখানে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীর আড়ালে বিএনপির প্রার্থী নেই, সেখানে উৎসবমুখর নির্বাচন করতে গিয়ে বিদ্রোহীদের বসিয়ে দেওয়া হয়নি। কিন্তু ভোটের পরিবেশ যারাই নষ্ট করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকা মহানগরে কমিটি গঠনে বিদ্রোহীদের জায়গা হচ্ছে না : ঢাকায় ‘সাংগঠনিক দুর্বলতা’ কাটিয়ে মাঠ গোছানোয় মনোযোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য দলের একেবারে তৃণমূল থেকে কাজ শুরু করেছে দলটি। ইতিমধ্যে ইউনিট কমিটি গঠন শুরু হয়েছে। ইউনিট কমিটি থেকে শুরু করে ওয়ার্ড-থানা সম্মেলনে জায়গা হচ্ছে না বিগত সিটি নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিল তাদের। দলটির নীতিনির্ধারকরা এমনটাই জানিয়েছেন। ১১ অক্টোবর ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অধীন ইউনিটসমূহের সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। এ পর্যন্ত ১৩০টি ইউনিট সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। দক্ষিণে সদস্য সংগ্রহ করে সম্মেলন প্রক্রিয়া এগিয়ে রাখছেন। সূত্রমতে, ঢাকায় দলকে শক্তিশালী দেখতে চায় দলের হাইকমান্ড। এ জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলের নেতারা মনে করেন, করোনায় দীর্ঘদিন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকায় ঝিমোচ্ছিল ঢাকার তৃণমূল। তেমন কোনো কর্মসূচি ছিল না দলটির। এখন ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। এ জন্য দলের দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের দিয়েই কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি, বিগত সিটি নির্বাচনের সময় দল মনোনীত কাউন্সিলের বিপক্ষে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিল তাদের জায়গা দেওয়া হচ্ছে না। আগামীতেও হবে না। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ হলে থানা সম্মেলন শুরু হবে। এসব কমিটিতে যেন কোনো বিদ্রোহী ও অনুপ্রবেশকারী জায়গা না পায় সে নির্দেশনা দেওয়া আছে। বিদ্রোহীদের দলে পদ-পদবি তো দেওয়াই হবে না, তাদের জন্য চিরতরে দলের দরজা বন্ধ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর