বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

২০ বছর পর রোগীর পেটে মিলল অপারেশনের কাঁচি

মেহেরপুর প্রতিনিধি

মেহেরপুরের গাংনীতে ২০ বছর পর রোগীর পেটে মিলল অপারেশনের কাঁচি। কয়েক দিন আগে স্থানীয়দের পরামর্শে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজা নাসিমের কাছে চিকিৎসা নিতে গেলে রোগীকে এক্স-রে করানো হয়। এক্স-রে রিপোর্টে পেটের মধ্যে ৪-৫ ইঞ্চির একটি কাঁচির সন্ধান পাওয়া যায়। এমন খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে গতকাল সকাল থেকেই তাকে দেখতে বাড়িতে    ভিড় জমায় এলাকাবাসী। ছুটে আসেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। জনা গেছে, ২০০২ সালে রাজা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসেন বাছেনা খাতুন। রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা তাকে পিত্তথলির পাথর অপারেশন করার পরামর্শ দেন। ওষুধপত্র ও অপারেশন ফি বাবদ ২০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা। স্ত্রীর অপারেশনের জন্য একমাত্র সম্বল ১০ কাঠা জমি বিক্রি করেন আবদুল হামিদ।

গত ২০০২ সালের ২৫ মার্চ বাছেনার অপারেশন করেন সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিজানুর রহমান। তার সঙ্গে সহকারী ছিলেন রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা ও অ্যানেস্থেসিয়াসিস্ট ডা. তাপস কুমার। অপারেশনের এক সপ্তাহ পর বাছেনাকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

তবে অপারেশনের পর বাছেনা শরীরে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। বরং অসুস্থতা দিন দিন বাড়তেই থাকে। পুনরায় ডা. রাজার শরণাপন্ন হলে, তিনি ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা বলে ফেরত পাঠান। চিকিৎসকের কাছে পাত্তা না পেয়ে বাছেনার পেটের যন্ত্রণা বাড়তেই থাকে। পরে আবার ডা. রাজার সঙ্গে দেখা করেও কোনো লাভ হয়নি। পরে সুস্থ হতে বিভিন্ন এলাকার চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন বাছেনা। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিতে বিক্রি করতে হয় শেষ সম্বল দুটি গরুসহ বাড়ির আসবাবপত্র।  পেটের তীব্র যন্ত্রণায় বাছেনার আর্তচিৎকারে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। প্রতিবেশীরাও অনেক সময় বাছেনার বাড়িতে ছুটে আসেন। কয়েক দিন আগে স্থানীয়দের পরামর্শে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজা নাসিমের কাছে চিকিৎসা নিতে গেলে, বাছেনাকে এক্স-রে করানো হয়। এক্স-রে রিপোর্টে পেটের মধ্যে ৪-৫ ইঞ্চির একটি কাঁচির সন্ধান মেলে। ২০ বছর পর পেটের মধ্যে কাঁচির সন্ধান পাওয়ার খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাছেনা। এমন খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই বিষয়টি দেখতে বাছেনার বাড়িতে ভিড় জমায় এলাকার মানুষ। ছুটে আসেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাছেনা বলেন, আমি ২০ বছর আগে গাংনীর রাজা ক্লিনিকে পিত্তথলির পাথর অপারেশন করি। অপারেশনের পর দুটি পাথর আমাদের হাতে দিয়েছিলেন ডাক্তার রাজা। অপরেশনের পর সুস্থ হওয়ার কথা বলেছিলেন ডাক্তার। কিন্তু আমার পেটের যন্ত্রণা দিন দিন বাড়তেই থাকে। কয়েকবার আমার সমস্যার কথা জানাতে গিয়েও প্রতিকার পাইনি। অনেক জায়গায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে সহায়-সম্বল শেষ হয়ে গেছে। আমি এখন নিঃস্ব।

বাছেনার স্বামী আবদুল হামিদ বলেন, আমি একজন প্রতিবন্ধী। আমার একটি পা অচল। কেউ আমাকে কাজে নেয় না। আমি এখন কি করব তা ভেবে রাতে ঘুমাতে পারছি না। গত শনিবার আমার স্ত্রীকে রাজশাহীতে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে স্ত্রীর পেটের মধ্যে কাঁচি মিলেছে। আমি আবার কি দিয়ে তার অপারেশন করাব! আমার আর কিছুই নাই। কার কাছে গেলে সহযোগিতা পাব তাও জানি না। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। প্রতিবেশী আফরোজা খাতুন বলেন, প্রতি রাতে বাছেনার চিৎকারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে যাই। অনেক সময় তার কান্নায় আমাদেরও চোখে পানি আসে। অনেক টাকা খরচ করেও যদি ডাক্তার এমন ভুল করেন তাহলে আমরা কোথায় যাব? এই নিঃস্ব বাছেনার চিকিৎসার সব দায়িত্ব ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা বলেন, আমি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারি না। আমিও ওই অপারেশনের সময় সহকারী হিসেবে ছিলাম। ভুল হতে পারে। ডা. মিজানুর রহমান একজন সার্জারি বিভাগের ভালো চিকিৎসক। তিনি ওই সময় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চাকরি করতেন। তখন আমার ক্লিনিকে সব অপারেশন তিনিই করতেন। তিনিই ভুলটা করতে পারেন। মেহেরপুরে চাকরির সুবাদে তার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। হয়তো বা এটি তার অনাকাক্সিক্ষত ভুল। তবুও ২০ বছর বাছেনাকে কষ্ট পেতে হয়েছে। আমি এখন জানতে পারলাম। তাই ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সব দায়িত্ব আমি নেব। মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. জওয়াহেরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অনেক আগেই বিষয়টি খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের। রোগী ও রোগীর স্বজনরা ক্লিনিকে কয়েকবার বিষয়টি জানানোর পর আবারও পরীক্ষা করে দেখা উচিত ছিল। ক্লিনিক মালিক সেটি করেননি। আমি বিষয়টি শুনলাম। রোগীর লোকজন লিখিত অভিযোগ দিলে আমি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

 

সর্বশেষ খবর