চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুকে স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও স্বামীর বন্ধু এস এম ওয়াই আবদুল্লাহ ফরহাদ গলা টিপে হত্যা করেছেন। পাশাপাশি হত্যার নেপথ্যের কারণ ও হত্যা-পরবর্তী শিমুর লাশ গোপনের আদ্যোপান্ত বর্ণনা দিয়েছেন তারা। এ হত্যার দায় স্বীকার করে বৃহস্পতিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন দুই বন্ধু। গতকাল দুপুরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ-দক্ষিণ) মো. হুমায়ন কবীর এসব তথ্য তুলে ধরেন।
ওই জবানবন্দি থেকে জানা যায়, নোবেলের বাল্যবন্ধু ফরহাদ প্রায়ই কলাবাগান এলাকায় তার বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। এই সূত্রধরে গত ১৬ জানুয়ারি সকালে ফরহাদ তাদের গ্রিন রোডের বাসায় আসেন। এ সময় নোবেল তার স্ত্রী শিমুকে চা বানাতে বলেন। চা দিতে দেরি হওয়ায় নোবেল রান্নাঘরে যান। গিয়ে দেখেন স্ত্রী শিমু মোবাইল ফোনে ব্যস্ত। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুমুল ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে নোবেল তার বন্ধু ফরহাদকে ডাক দেন এবং সহায়তা করতে বলেন। এ সময় নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ মিলে শিমুর গলা টিপে ধরলে ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে ফরহাদ বস্তায় শিমুর লাশ ভরে সেটি সুতা দিয়ে সেলাই করেন। নোবেল বাড়ির দারোয়ানকে নাস্তা আনতে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন। এই ফাঁকে শিমুর বস্তাবন্দি লাশটি তারা গাড়ির পেছনে রাখেন। পরে নোবেল ও ফরহাদ লাশটি নিয়ে রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় গুম করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন। সুযোগ না পেয়ে লাশটি নিয়ে সন্ধ্যায় ফের বাসায় ফেরেন তারা। ওই দিন রাতেই আবার লাশটি নিয়ে তারা মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ পার হয়ে কেরানীগঞ্জের হযরতপুরে যান। সুযোগ বুঝে তারা আলীপুর ব্রিজের কাছে রাস্তার পাশে বস্তাবন্দি শিমুর লাশটি ফেলে পালিয়ে আসেন। ১৭ জানুয়ারি সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ অজ্ঞাত হিসেবে শিমুর লাশ উদ্ধার করে। পরে ঢাকা জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সহায়তায় অভিনেত্রী শিমুর লাশ শনাক্ত করা হয়। শিমুর লাশ বহনকারী গাড়িতে থাকা একটি সুতার বান্ডেল জব্দ করে পুলিশ। এই সুতার সঙ্গে শিমুর লাশের বস্তার সেলাইয়ের সুতার মিল দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। পরে শিমুর স্বামী নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদকে আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ পুলিশের কাছে কিছু উল্টোপাল্টা তথ্য দেন। তবে তিন দিনের রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনেই তারা আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেরানীগঞ্জ সার্কেল সাহাবুদ্দীন কবীর, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ছালাম মিয়া, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রোমজানুল হক ও পরিদর্শক (অপারেশন্স) মো. আশকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।