মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

অর্থনৈতিক চাপের সম্পর্ক রয়েছে

অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা

অর্থনৈতিক চাপের সম্পর্ক রয়েছে

মানুষ বাঁচে একটি আশা, উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ নিয়ে। যখন মানুষ দেখে যে তার বাঁচার আর কোনো জায়গা নেই তখন নিজেকে শেষ করে দেয়। সামাজিক অপরাধগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক চাপের সম্পর্ক রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সামাজিক অপরাধের মধ্যে আত্মহত্যার বিষয়টিকে আমরা সামাজিক প্রপঞ্চ হিসেবে দেখি। এর সঙ্গে সমাজে বিরাজমান সামাজিক-অর্থনৈতিক সংস্কৃতিও জড়িত। সামাজিক অপরাধের যে ঘটনাগুলো এখন আমরা ঘটতে দেখছি তা সেই সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাকেই নির্দেশ করে। মানুষ যখন অর্থনৈতিকভাবে সম্পদশালী থাকে তখনো কখনো কখনো এ ধরনের অপরাধ ঘটাতে পারে। আবার যখন হঠাৎ করে অর্থনৈতিক ধস নামে তখনো সামাজিক অপরাধ ঘটতে পারে। অর্থনৈতিকভাবে মানুষ যখন কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যায়, যেমন ঋণ নিতে নিতে তার আর ঋণ নেওয়ার কোনো জায়গা থাকে না তখন এই মানসিক অবস্থা ঋণগ্রস্ত মানুষটিকে কুরে কুরে খায়। বিষয়টি সেই মানুষটিকে ভীষণভাবে মনস্তাত্ত্বিকভাবে আঘাত করে। এ আঘাতের জন্য লোকটির দাম্ভিকতার ফলে সে ক্রমান্বয়ে আত্মীয়স্বজন ও সহকর্মীদের থেকে দূরে সরে যায়। অর্থাৎ মানুষটি এক ধরনের চরম বিচ্ছিন্নতার দিকে চলে যায়। মানুষ যখন তার স্বাভাবিক সামাজিক সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যায় তখন আর বেঁচে থাকার আশা তার থাকে না। আর এ অবস্থাটি চরম ঋণগ্রস্ত মানুষের জন্য আরও সত্য হয়ে যায়। তখন সেই লোকটি নিজের সঙ্গে তার পরিবারের লোকদের বাঁচিয়ে রাখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। লোকটি তখন এই চরম মানসিক অবস্থা ও দাম্ভিকতা থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে থাকে। কিন্তু সামাজিকভাবে এ অবস্থা থেকে মুক্তির পথ সে পায় না। কারণ সে ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। আর এটি সে কারও কাছে প্রকাশও করতে পারছে না। তখন সে তার ও পরিবারের অন্যদের মৃত্যুর মধ্য দিয়েই মুক্তির পথ খোঁজে। কিন্তু এটি চরম ভুল। ভয়াবহ মানসিক ট্রমা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই এখন আত্মহত্যা, হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তির পথ খুঁজছে। এ কারণে এখন সামাজিক অপরাধের বিভিন্ন ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে।

জিনাত হুদা বলেন, যারা এ পথে গিয়েছেন বা যাওয়ার কথা চিন্তা করছেন তাদের বুঝতে হবে কোনো ধর্মেই আত্মহত্যাকে মুক্তির পথ হিসেবে মনে করা হয় না। এটি মহাপাপ। যারা চরমভাবে বিচ্ছিন্নতায় ভুগছেন তাদের নিজেদের মনের কথাগুলো পরিবারের অন্য সদস্য ছাড়াও তার মা-বাবা, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে হবে। এতে এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ হয়তো পাওয়া যেতে পারে। বর্তমান যতই কঠিন হোক না কেন, ভবিষ্যৎ সুন্দর আসতে পারে এ ধরনের ইতিবাচক ধারণা ও মূল্যবোধ সবার চর্চার মধ্যে থাকতে হবে। ছোটবেলা থেকেই সবার মধ্যে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াগুলো পরিবার থেকে শিক্ষা দিতে হবে। যতই সমস্যা আসুক না কেন, জীবন অমূল্য সম্পদ এ বিশ্বাস রাখতে হবে। জীবনকে গুরুত্ব দিতে হবে, মৃত্যু বা আত্মহত্যাকে নয়- এ ধরনের সামাজিক প্রচার ও ক্যাম্পেইন সমাজে থাকতে হবে।

সর্বশেষ খবর