বুধবার, ১১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

পি কের দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

টাকা লুটের ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

অসৎ উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ের পরও সম্পদ বিবরণী দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা না দেওয়ায় দেশের আর্থিক খাতের কেলেঙ্কারিতে আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) সহযোগী পূর্ণিমা রানী হালদার ও তার স্বামী স্বপন কুমার মিস্ত্রির বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। গতকাল সংস্থাটির উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান ও সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত বাদী হয়ে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা করেন। এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে সাড়ে ৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদ বিবরণী দাখিল না করার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান। সাঈদ মাহবুব খান বলেন, দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনে করা একটি মামলায় পূর্ণিমা রানী হালদারের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা ও অপর মামলায় স্বপন কুমার মিস্ত্রির বিরুদ্ধে ১ কোটি ১১ লাখ ২২ হাজার ৫২২ টাকা জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাংবাদিকদের বলেন, তাকে ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া তার ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ কিছু নথিপত্র আমরা সরবরাহ করেছি। সাঈদ মাহবুব খান বলেন, পি কে সিন্ডিকেটের ৩৩ জনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে সম্পদ বিবরণী জারির নোটিশ ইস্যু করা হয়। তার মধ্যে ১৩ জন নির্দিষ্ট সময়ে সম্পদ বিবরণী দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করেননি। পর্যায়ক্রমে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে অন্যদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে। দুদক সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত পি কে হালদারের সহযোগী ৮৩ জন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। ৬৪ জন আসামি ও অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে পি কে হালদার সিন্ডিকেট সংশ্লিষ্ট ১৩ জন আসামিকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ১১ জন আসামি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পি কের সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৪টি মামলা করেছে দুদক।

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি দুদকের গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। পি কে সংশ্লিষ্ট ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে দুদক।

রানা বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও এস এ ট্রেডিংয়ের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা : কাজ না করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৭ কোটি টাকা ক্ষতিসাধন এবং কার্যাদেশ ব্যবহার করে ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ৪০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রানা বিল্ডার্সের এমডি মো. আলম ও মেসার্স এস এ ট্রেডিংয়ের প্রোপ্রাইটর সালেহ আহমেদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রানা বিল্ডার্সের এমডি মো. আলম ও মেসার্স এস এ ট্রেডিংয়ের প্রোপ্রাইটর সালেহ আহমেদসহ একটি মামলায় সাতজন ও অপর মামলায় আটজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দুটি দুদক সজেকা চট্টগ্রাম-১ এ দায়ের করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, সরকারি অর্থ আত্মসাতের অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে চরম গণভোগান্তি সৃষ্টি করে সরকারি ৪ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার ৪২৯ টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধন করার এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ও অরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে নিজেরা লাভবান হয়ে অপরকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে ইউসিবিএল, কুমিল্লা শাখায় অবৈধভাবে হিসাব খুলে ও অপর্যাপ্ত সম্পদ মর্টগেজ রেখে ঋণ গ্রহণপূর্বক পরিশোধ না করে ২০ কোটি (সুদ আংশিক পরিশোধের পর) ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুদাসলে ২২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার দায়ে আসামি মো. জাকির হোসেন, মোহাম্মদ মো. আলম, মোহাম্মদ সরোয়ার আলম, মো. আনিসুজ্জামান, সাইফুল আলম মজুমদার, মকামে মাহমুদুল ইসলাম ও দেবু বোসের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। অন্যদিকে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অসৎ অভিপ্রায়ে পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ২ কোটি ৭৬ লাখ ৩৭ হাজার ৯১৮ টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধন করার এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ও অরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে নিজেরা লাভবান হয়ে অপরকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে ইউসিবিএল, কুমিল্লা শাখায় অবৈধভাবে হিসাব খুলে ও অপর্যাপ্ত সম্পদ মর্টগেজ রেখে ঋণ গ্রহণপূর্বক পরিশোধ না করে ২০ কোটি যা ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুদাসলে ২৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার দায়ে আসামি মো. জাকির হোসেন, মো. আলম, ছালেহ আহাম্মদ, মোহাম্মদ সরোয়ার আলম, মো. আনিসুজ্জামান, সাইফুল আলম মজুমদার, মকামে মাহমুদুল ইসলাম ও দেবু বোসের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করা হয়।

সর্বশেষ খবর