শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
ফেসবুকে পরিচয়

ভারতের ছেলে বাংলাদেশের মেয়ের বিয়ে পশ্চিমবঙ্গে

কলকাতা প্রতিনিধি

সালটা ২০১৯, সে বছরই ফেসবুকে আলাপ দুজনের। প্রেমিকা তখন প্রতিবেশী বাংলাদেশে, প্রেমিক ভারতের পশ্চিমবঙ্গে।  প্রথম পর্যায়ে পড়াশোনা বিষয়ে কথাবার্তা হয় তাদের উভয়ের মধ্যে। করোনা অতিমারি, লকডাউনের মধ্যেও ফেসবুকেই কথাবার্তা চলতে থাকে। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে সেই সম্পর্ক তৈরি হয়েছে প্রেমে।

এরপর করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হওয়ায় উঠে যায় লকডাউন। দুই দেশের মধ্যে যানবাহন চলাচলও শুরু হয়। প্রেমিককে একটিবার নিজের চোখে দেখার জন্য মন উশখুশ করে প্রেমিকার। ফলে প্রেমের টানে সব বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকের ডিমারিহাট এলাকায় অবস্থিত যুবক মানস মাঝির বাড়িতে ছুটে আসে প্রেমিকা ঝুমা। কিন্তু ফেসবুকে আলাপ হওয়া বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানার বাসিন্দা ওই তরুণীর সঙ্গে ছেলের বিয়ে দেবেন কি না তা নিয়ে মানসের বাড়িতে প্রথমে একটু আপত্তি ছিল। যদিও পরবর্তীতে খোঁজখবর নিয়ে ঝুমার পরিবারের সদস্যরা পশ্চিমবঙ্গে এসে মানসের পরিবার ও তার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খোঁজখবর নিয়ে বিয়ের ব্যাপারে সম্মতি জানান। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তমলুকের দেবী বর্গভীমা মন্দিরে চার হাত এক হয়। বাঙালি রীতি মেনে বর-কনের সাজে আত্মীয়-পরিজনের উপস্থিতিতে মহা ধুমধামের সঙ্গে বিবাহ সম্পন্ন হয়। জানা গেছে, বাবা-মাসহ ঝুমার পরিবারের সদস্যরা বৈধ নথি (পাসপোর্ট ও ভিসা) নিয়েই ভারতে প্রবেশ করে।

কার্যত মেয়ের আবদার রাখতেই বাংলাদেশ থেকে ছুটে আসে ঝুমার পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়-স্বজনরা। পরিবারের সম্মতিক্রমে ও সরকারি আইন মেনে ঝুমা এবং মানসের বিবাহ সম্পন্ন হয়। মন্দিরে বিয়ের পর মানসের বাড়িতে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়।

ফেসবুকে আলাপের পর একে অপরকে কাছে পেয়ে বেজায় খুশি তারা। তারা ভাবতে পারেনি দুজনে এক হয়ে সংসার করবেন। ঝুমা জানান, ‘ফেসবুকে পরিচিত হওয়া, আলোচনার পর মনে হয়েছে মানস খুব ভালো ছেলে এবং ওর সঙ্গে সারাটা জীবন কাটানো যায়। এরপর আমার পরিবারের তরফ থেকেও খোঁজখবর নেওয়া হয়। তারাও সন্তোষ প্রকাশ করে এবং পরবর্তীতে এ বিষয়টি নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হই। বিয়েতে মা-বাবা এসেছেন তাদের সম্মতিতেই আমাদের এই বিয়ে অনুষ্ঠান হয়েছে।’ বিয়ের পর পশ্চিমবঙ্গে স্বামীর ঘর করবেন বলেও জানান ঝুমা। মানস জানান, ‘নিজের জীবন সঙ্গিনীকে পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’ তিনি আরও জানান, ‘ঝুমা যেহেতু একজন বিদেশি নাগরিক, তাই সেক্ষেত্রে বেশ কিছু সরকারি নথি সংগ্রহ করতে হয়েছিল এবং এর জন্য প্রায় এক মাসের বেশি সময় বিভিন্ন সরকারি দফতরে ঘোরাঘুরি করে অবশেষে মঙ্গলবার আমরা বিয়ে করি।’ দুই পরিবারের তরফ থেকে সমর্থন না পেলে এই বিয়ে সম্ভব হতো না বলেও জানান তিনি। বর্গভীমা মন্দির কর্তৃপক্ষ অয়ন অধিকারী জানান, প্রায় প্রতিদিন বর্গভীমা মাকে সাক্ষী রেখে বহু বিবাহ হয়ে থাকে। তবে আজকের এই বিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। তার অভিমত ভালোবাসা যে কোনো কাঁটাতার সীমানা মানে না এই বিয়ে তারই উদাহরণ। তাছাড়া এই বিয়ের মধ্য দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মেলবন্ধন ঘটল। নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানানো হয় মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে। মানস ও ঝুমার সম্পর্কের মতো দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়ে উঠুক- এই কামনা করেন বিবাহের অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা।

সর্বশেষ খবর