মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

টিকিটের জন্য দুই দিন অপেক্ষা

রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হচ্ছে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র ঈদুল আজহায় বাড়ি ফেরা উপলক্ষে ১ জুলাই থেকে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আজ মঙ্গলবার ৯ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রির মধ্য দিয়ে বাড়ি ফেরার টিকিট বিক্রি শেষ হবে। গতকাল ৮ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। গত কয়েক দিনের মতো গতকালও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশীদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। অনেকে একটি টিকিট পেতে টানা দুই দিন রেলস্টেশনে লাইনে অপেক্ষা করেছেন। গতকাল সকাল ৮টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে টিকিটের জন্য যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে ছিল টিকিটপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন। সকালে টিকিট বিক্রি শুরুর মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে সব কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়। চাহিদার তুলনায় কম থাকার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীদের টিকিট না পেয়েই প্ল্যাটফরম ছাড়তে হয়েছে। কাউন্টারের পাশাপাশি অনলাইনেও ছিল টিকিট কেনার চাপ। আর এসি (স্নিগ্ধা) টিকিটের ছিল হাহাকার। প্রতিটি লাইনে ৮ থেকে ১০ জন এসি টিকিট পেলেও পরে কেউ এসির টিকিট পাননি বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। জানা গেছে, বিভিন্ন দফতরের আবদার রক্ষা করতেই তাদের বেশির ভাগ এসি টিকিট দিয়ে দিতে হয়েছে। তাই লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের অনেককে এসি টিকিট থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে। কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজারের কক্ষে গিয়েও এর প্রমাণ মিলেছে। সেখানে দেখা গেছে, বিভিন্ন দফতর থেকে আসা অর্ধশতাধিক চিঠিতে এসি টিকিট দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে স্টেশন ম্যানেজার মাহাম্মদ মাসুদ সারওয়ারকে দফায় দফায় ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

কমলাপুর রেলস্টেশনে গতকাল কথা হয় টিকিট নিতে আসা আশিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, পার্বতীপুর যেতে নীলসাগর এক্সপ্রেসের একটি টিকিট কিনতে শনিবার রাতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। পরদিন রবিবার সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পর সকাল ১০টার পরপরই কাউন্টারে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়। কিন্তু লাইনের পেছনের দিকে থাকায় সেদিন তিনি টিকিট পাননি। টিকিট না পেয়ে রবিবার সকালেই ফের দাঁড়িয়ে যান লাইনে। গতকাল সোমবার তিনি নীলসাগর এক্সপ্রেসের দুটি টিকিট পেয়েছেন। এভাবে অনেকেই বাড়ি ফেরার টিকিটের জন্য দুই দিন অপেক্ষা করেছেন রেলস্টেশনের লাইনে।

গতকাল রেলভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, অনেকে টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। চাহিদার তুলনায় টিকিট কম থাকায় সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ঈদে যাত্রী চাহিদা সামনে রেখে বিভিন্ন ট্রেনে এক্সট্রা বগি সংযুক্ত করা হচ্ছে। কাউন্টারের পাশাপাশি অনলাইনেও ছিল টিকিটের চাপ। টিকিট সিস্টেম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সহজের জনসংযোগ ব্যবস্থাপক ফারহাত আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরুর পর (গতকাল) প্রথম মিনিটে প্রায় ৬ লাখ হিট হয়েছে রেলওয়ের ই-টিকিটিং সার্ভারে (ওয়েবসাইট ও অ্যাপস)। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত (গতকাল) অনলাইনে ঈদ উপলক্ষে ১১ হাজার ৯৪৮টি টিকিট বিক্রি করা হয়েছে।

তথ্যমতে, ঈদে বাড়ি ফেরা উপলক্ষে প্রতিদিন ২৬ হাজার ৭৩৯টি টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এর অর্ধেক অনলাইনে, আর বাকি অর্ধেক কাউন্টার থেকে।

বগি রেখেই চলে গেল ট্রেন : ঢাকা থেকে পঞ্চগড়গামী আন্তনগর একতা এক্সপ্রেস ট্রেন একটি বগি (ট) ছাড়াই গতকাল ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে গেছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন ছাড়ে। ফলে ছেড়ে যাওয়া সেই কোচের যাত্রীরা যেতে না পেরে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। এর আগে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, ট্রেনের ‘ট’ বগি সংযোজন করা সম্ভব হয়নি। তাই যারা এ বগির টিকিট ক্রয় করেছিলেন, তাদের ৫ নম্বর কাউন্টারে টিকিট ফেরত দিয়ে সমপরিমাণ টাকা বুঝে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু বগির ভিতরে অনেক যাত্রী ট্রেন চলে যাওয়ার পর বিষয়টি টের পান। কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোচটি নষ্ট থাকায় বাদ দেওয়া হয়েছে। সুযোগ থাকলে আরেকটি কোচ সংযুক্ত করা যেত। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি দেওয়ার।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর