শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

এখনো ঘরছাড়া ১৪ হাজার মানুষ

সিলেটে বন্যায় অনেক বসতবাড়ি থেকে নামেনি পানি, আশ্রয় কেন্দ্রেই দিন কাটছে মানুষের

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

এখনো ঘরছাড়া ১৪ হাজার মানুষ

সিলেটে এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে দিন কাটাচ্ছেন বানভাসি মানুষ। ছবিটি দক্ষিণ সুরমার মহালক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিলেটে নদ-নদীর পানি কমলেও এখনো পানিবন্দি রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বসতবাড়ি থেকে পানি না নামায় তারা ফিরতে পারছেন না বাড়ি। এখনো জেলার বন্যা আক্রান্ত বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার মানুষ। বাড়ি ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে তাদের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, ধীরগতিতে কুশিয়ারার পানি হ্রাস এবং হাওরগুলো পানিতে পূর্ণ থাকায় এখনো অনেক এলাকা নিমজ্জিত রয়েছে। তাই এসব এলাকা থেকে পানি নামতে আরও সময় লাগবে।

জানা গেছে, সিলেটের সুরমা, ধলাই, পিয়াইন, লোভা ও সারি নদীর পানি দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় এসব নদী তীরবর্তী উপজেলাগুলো থেকে বন্যার পানি প্রায় নেমে গেছে। ফলে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্রগুলো থেকে লোকজন বাড়ি ফিরে গেছেন। কিন্তু কুশিয়ারা নদীর পানি ধীরগতিতে হ্রাস পাওয়ায় এখনো পুরোপুরি বন্যামুক্ত হয়নি জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বালাগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা। প্রায় এক মাস ধরে এসব উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার লোকজন পানিবন্দি রয়েছেন। বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট থেকে পানি না নামায় এখনো তারা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে তারা দিনাতিপাত করছেন আশ্রয় কেন্দ্রে।

এদিকে, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বর্তমানে সরকারি উদ্যোগে ত্রাণ হিসেবে খাবার বিতরণ বন্ধ রয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগেও কমে গেছে ত্রাণ কার্যক্রম। তাই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঠাঁই নেওয়া লোকজন পড়েছেন মারাত্মক বিপাকে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় দিনে একবেলা খাবার জুটলেও উপোস করতে হচ্ছে বাকি সময়। বন্যাকবলিত এলাকায় কর্মসংস্থান না থাকায় পানিবন্দি মানুষদের বেকার অবস্থায় থাকতে হচ্ছে।

সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ২২১টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ অবস্থান করছেন। বন্যার শুরুতে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরতদের সংখ্যা ছিল প্রায় আড়াই লাখ। সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার আহসানুল আলম জানান, এবার বন্যায় জেলার ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩টি পরিবারের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ সহস্রাধিক ঘরবাড়ি। এসব ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া গৃহমঞ্জুরি বাবদ ৬০ লাখ টাকা ও ২ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ ও পুনর্বাসন বাবদ ২ হাজার ১১২ মেট্রিক টন চাল, ২০ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ। এর মধ্যে ১ হাজার ৯২৮ মেট্রিক টন চাল, ২০ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ ৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং ১০ লাখ টাকা করে শিশু ও গো-খাদ্যের জন্য বিতরণ করা হয়েছে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ জানান, সিলেটে নদ-নদীর পানি কমছে। তবে, কুশিয়ারা নদীর পানি হ্রাসের গতি খুবই কম। এ ছাড়া সিলেটের নদ-নদীর পানি সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর দিয়ে নামে। কিন্তু হাওরগুলো পূর্ণ হওয়ায় পানি নামছে ধীরগতিতে। ফলে এখনো কুশিয়ারা তীরবর্তী অঞ্চলের অনেক জায়গার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর