শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

ডানলপের নীলকুঠি ব্রিটিশ অত্যাচারের নীরব সাক্ষী

মাদারীপুর প্রতিনিধি

ডানলপের নীলকুঠি ব্রিটিশ অত্যাচারের নীরব সাক্ষী

ব্রিটিশরা ২০০ বছর ধরে এই উপমহাদেশে শাসন ও শোষণ করেছে। এই শোষণের সাক্ষী হিসেবে এখনো রয়ে গেছে ‘ডানলপের নীলকুঠি’। এর অবস্থান মাদারীপুর সদরের ছিলারচর ইউনিয়নের আউলিয়াপুর গ্রামে।

এই নীলকুঠির ১২টি কক্ষের অবশিষ্ট কিছু ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান। পরিত্যক্ত দেয়ালে চারদিকে জন্মেছে বুনো ঘাস ও লতাপাতা। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ৪০ ফুট উঁচু একটি চিমনি। দেখতে কিছুটা মঠ আকৃতির। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা এই চিমনি ও ধ্বংস প্রায় ১২টি কক্ষ ২০০ বছর আগের ইতিহাসে শোষণের এক ভয়াল সাক্ষী।

ইতিহাসের তথ্যানুযায়ী, ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধের কয়েক বছর পর, ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের পরে সেখানে বস্ত্রশিল্পে নীলের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। তাই ১৭৭৭ সালের পরপরই অধিক মুনাফার আশায় বাংলায় আসেন নীল চাষের জন্য বেশ কয়েকজন নীলকর। এর মধ্যে বর্তমান মাদারীপুর সদর উপজেলার ছিলারচর ইউনিয়নের আউলিয়াপুর (তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুরের অংশ) এলাকায় আসেন ইংরেজ নীলকর ডানলপ। এখানকার মাটি নীলচাষের উপযোগী হওয়ার ডানলপ তার বিশ্বস্ত জমিদার কালী প্রসাদের মাধ্যমে ১২ একর জায়গায় গড়ে তোলেন নীলকুঠি। আশপাশের কৃষকদের এই নীলকুঠিতেই অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে বাধ্য করা হতো নীলচাষ করতে। নির্যাতনের ফলে একসময় এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে তৈরি হয় তীব্র ক্ষোভ। যার ফলশ্রুতিতে ১৮৪৫ সালে ঐতিহাসিক ফরাজি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাজী শরীয়তউল্লাহ ও তার পুত্র পীর মহসীনউদ্দীন (দুদু মিয়া) নির্যাতিত কৃষকদের নিয়ে গড়ে তোলেন লাঠিয়াল বাহিনী। হাজী শরীয়তউল্লাহ মারা যাওয়ার পর এই লাঠিয়াল বাহিনীর হাল ধরেন দুদু মিয়া। ১৮৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর আউলিয়াপুর নীলকুঠি হতে ৩ কিলোমিটার অদূরে ‘রণখোলা’ নামক স্থানে দুদু মিয়ার নেতৃত্বে তার লাঠিয়াল বাহিনীর সঙ্গে ডানলপ বাহিনীর প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ডানলপ বাহিনী পরাজিত হয়। পরে নীলকর ডানলপ পালিয়ে ফরিদপুরে যাওয়ার পথে বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরের আলফাডাঙ্গার বুরাইচ ইউনিয়নের মীরগঞ্জে এলাকায় কৃষক জাহেদ শেখ-এর রাম দায়ের আঘাতে ঘোড়াসহ নিহত হন। ওইদিনেই দুদু মিয়ার লাঠিয়াল বাহিনী মাদারীপুরের আউলিয়াপুরের নীলকুঠিতে ভাঙচুর চালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। তবে অক্ষত থাকে ৪০ ফুট উচ্চতার চুল্লির চিমনি, যা এখনো রয়েছে।

নীলচাষ ইতিহাসে সাক্ষী এই নীলকুঠি। এখন সংরক্ষণের অভাবে এর জায়গা অনেকটাই বেদখল হয়ে গেছে। চুল্লির চিমনিটিও ধ্বংসের মুখে। সরেজমিনে নীলকুঠিতে গিয়ে দেখা গেছে, চারদিকে ঘেরা লতাপাতায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে নীলকুঠি। এর ১২ একর জমির বেশির ভাগই দখল করে স্থানীয়রা তুলেছেন বসতঘর। ১২টি কক্ষের ধ্বংসাবশেষগুলো কোনো রকমে টিকে আছে। দেয়াল থেকে খসে পড়ছে ইট। জায়গাটিতে চরছে গরু, ছাগল। মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘মাদারীপুরের ছিলারচরে যে নীলকুঠিটি আছে তা আমরা সংরক্ষণ করার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আমি পরিদর্শনে গিয়ে জায়গাটি দেখেছি। আমরা এটাকে কেন্দ্র করে একটি পর্যটন কেন্দ্র করার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করব।’

সর্বশেষ খবর